বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকার বসতি, অবকাঠামোসহ সামগ্রিক ভূচিত্রে একটা রূপান্তর লক্ষ করা যাচ্ছে। পৌর এলাকায় তো বটেই, এমনকি গ্রামগঞ্জ, হাটবাজার, উপজেলা সদর—সর্বত্রই অপরিকল্পিতভাবে পাকা বাড়িঘর ও বসতি এলাকা সম্প্রসারিত হচ্ছে। অথচ কিছুদিন আগপর্যন্তও গ্রামীণ এলাকা ঘরবাড়ি নির্মাণে নিজস্ব স্বাতন্ত্র্য ধরে রেখেছিল। যুগ যুগ ধরে স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য উপকরণ দিয়ে বাড়িঘর তৈরি করার রেওয়াজ ছিল। স্থানীয় পরিবেশ, জলবায়ু, ভূমিরূপ, কারিগরদের নির্মাণকৌশলের দক্ষতা ইত্যাদি বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলত। আর সেই কারণে ছোট এই দেশের ভেতরেও বিভিন্ন অঞ্চলে বাড়ি নির্মাণে বৈচিত্র্যপূর্ণ স্থাপত্য ও ঐতিহ্য এখনো পরিলক্ষিত হয়।
ভারতীয় উপমহাদেশের এই অঞ্চলে সুপ্রাচীনকাল থেকে বাড়িঘর নির্মাণ করার ক্ষেত্রে নানা ধরনের রীতিনীতি, কলাকৌশল মেনে চলতে দেখা যায়। এমনকি ঘরের ভেতরে রান্নাঘর, শোবার ঘর, বৈঠকখানা ইত্যাদি রুমের বিন্যাস করতেও লোকজ বিশ্বাস, ধ্যানধারণাকে পরিপূর্ণভাবে মেনে চলা হতো। আবহমানকাল থেকে খনার বচন বাংলার মানুষের যাপিত জীবনের অনুষঙ্গ হয়ে টিকে আছে। এ অঞ্চলের সূর্যের আলো, বাতাসের প্রবাহ, ঋতু পরিবর্তন, ঝড়–বৃষ্টির ধরনকে প্রাধান্য দিয়ে খনার বচন তৈরি হয়েছে, যা মানুষ ঘর তৈরিতে যুগ যুগ ধরে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছে।
‘দক্ষিণ দুয়ারী ঘরের রাজা
পুব দুয়ারী তার প্রজা
পশ্চিম দুয়ারীর মুখে ছাই
উত্তর দুয়ারীর খাজনা নাই।’
সম্পাদক ও প্রকাশক – মোঃ মাহবুবুল আলম