অনলাইন ডেস্ক
স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি একটি বড় ধরণের জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জীবনের মূল্যবান ও কর্মক্ষম সময়ে এই রোগ হয়। এতে ভুক্তভোগী ব্যক্তি পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে অর্থহীন হয়ে পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে আড়াই থেকে পাঁচ লাখ লোক মেরুদন্ডের আঘাতজনিত সমস্যায় ভোগেন।
বাংলাদেশে এই রোগ নিয়ে বড় মাপের গবেষণা হয়নি এবং এই রোগীদের কোন রেজিস্ট্রি ও সংরক্ষণ করা হয় না। তাদের জরুরী ও পুণর্বাসন চিকিৎসা ব্যবস্থা অপ্রতুল ও অবৈজ্ঞানিকভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। স্পাইনাল কর্ড ইনজুরিতে দেশের অর্থনীতির ক্ষতি হচ্ছে। আক্রান্ত পরিবার চিকিৎসা চালাতে গিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দরকার ব্যাপক গবেষণা ও সচেতনতা। এজন্য গণমাধ্যম বেশ ভূমিকা রাখতে পারে।
শনিবার (৭ জানুয়ারি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্পাইনাল কর্ড আঘাতপ্রাপ্ত রোগীদের ওপর গবেষণার প্রাথমিক ফলাফল নিয়ে ‘পিপল উইথ স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ফিজিক্যাল মেডিসিন এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ।
ফিজিক্যাল মেডিসিন এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ কে এম সালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। মুখ্য আলোচক ছিলেন সার্জারি অনুষদের ডিন, স্পাইন নিউরো সার্জন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন। প্রধান গবেষক হিসেবে ফিজিক্যাল মেডিসিন এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. তসলিম উদ্দিন স্পাইনাল কর্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত এক রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা গল্প আকারে তুলে ধরেন। মডারেটর ছিলেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. মসিউর রহমান খসরু।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান, ডিজিএইচএস এর পরিচালক (এমআইএস) অধ্যাপক ডা. মো. শাহাদাৎ হোসেন প্রমূখ। এই গবেষণার কো-অর্ডিনেটর ও কো ইনভেস্টিগেটর ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. তরিকুল ইসলাম গবেষণালব্ধ ফলাফল উপস্থাপনা করেন। বানস্কি স্টাডি গ্রুপের রিসার্চ এসিট্যান্ট ডা. আনিকা তাসনিম গবেষণার তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি তুলে ধরেন।
অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ফেইল সুইসাইডের কারণে মানুষ স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি বেশী হচ্ছে। স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি রোধে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে হবে। এছাড়াও গ্রামাঞ্চলে গাছ থেকে পড়ে অনেকেই স্পাইনাল কর্ড ইনজুরিতে পড়ছেন। এজন্য গ্রামে গাছে উঠার জন্য প্রশিক্ষণ দরকার। এ বিষয়ে নীতি নির্ধারকরা মনোবিশেষ করতে পারে। নারীদের স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি আক্রান্ত প্রতিরোধে ওড়না পরে রাস্তা পারাপার, মোটর বাইক ও রিক্সায় চলাচল করার সময় অধিক সচেতনা প্রয়োজন। কারণ অনেক নারী রাস্তায় চলাচল করার সময় রিক্সা ও মোটর বাইকে ওড়না পেচিয়ে স্পাইনাল কর্ড ইনজুরিতে পড়েন।
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন বলেন, স্পাইনাল কর্ড ইনজুরির প্রধান কারণ সড়ক দূর্ঘটনা। দ্বিতীয় প্রধান কারণ উচু গাছ ও বাড়ির ছাদ থেকে পরে যাওয়া। এসব প্রতিরোধের জন্য সচেতন হওয়া যেমন ট্রাফিক আইন মেনে চলা, ড্রাইভারকে সচেতন করা ইত্যাদি দরকার। এছাড়াও স্কুল শিক্ষার্থীদের ভারী ব্যাগ বহন না করা উচিত।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০১৮ থেকে ২০২২ পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশে ১৮টি ইনস্টিটিউট এবং প্রাইভেট চেম্বার থেকে মোট ২৪৬৯ জন আঘাতজনিত এবং রোগ সম্পর্কিত স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি (এসসিআই) রোগীকে গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এর মধ্যে ১৬৯৮ জন (৬৮.৮%) পুরুষ এবং ৭৭১ জন (৩১.২%) নারী। বেশিরভাগ রোগী, ৮৬৪ জন (৩৫%), ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী গ্রুপের অন্তর্গত। তাদের মধ্যে ১৪০৯ জন (৫৭.১%) আঘাতজনিত স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি রোগী, ১০১৪ জন (৪১.১%) রোগ সম্পর্কিত, আর ৪৬ জন (১.৯%) কড়া ইকুইনা সিন্ড্রোমে আক্রান্ত। ভর্তির সময় ১৫১৬ জন (৬১.৪%) জন ঝঈও আক্রান্ত ব্যক্তিকে টেট্রাপ্লেজিক এবং ৯৫৩ (৩৮.৬%) জনকে প্যারাপ্লেজিক হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছিল। রোগ-সম্পর্কিত ঝঈও এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল অবক্ষয় (৪২.৫%), তারপর টিউমার (৪০.৩%) এবং পরে যক্ষ্মা (১১.৮%) আক্রান্ত রোগী। সাথে ছিল মাথার আঘাত এবং হাত পা হাড়ের ফ্র্যাকচার। সবচেয়ে বেশি জটিলতা ছিল অস্ত্রের মূত্রাশয় (৭.৩%) এবং চাপের আঘাতজনিত জটিলতা (১.৭%)। আঘাতজনিত ঝঈও-এর রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী ছিল উপর থেকে পড়ে যাওয়া (৪৫.৪৩%), এরপরে সড়ক দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্ত (২৯.৩৮%)। বেশিরভাগ আঘাতমূলক স্পাইনাল কর্ড ইনজুরির সাথে ছিল মাথার আঘাত এবং হাত পা হাড়ের ফ্রাকচার । সবচেয়ে বেশী জটিলতা অন্ত্রের- মূত্রাশয় ( ৭.৩%) এবং চাপের আঘাতজনিত জটিলতা (১.৭%) ছিল।
দৈনিক এরোমনি প্রতিদিন ডটকম তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন অনলাইন নিউজ পোর্টাল