ঢাকারবিবার , ১৫ জানুয়ারি ২০২৩
  1. ই পেপার
  2. ক্যাম্পাস
  3. খেলা
  4. চাকরি
  5. জাতীয়
  6. জীবনযাপন
  7. ধর্ম
  8. পাঠক কলাম
  9. পাবনা জেলা
  10. বাণিজ্য
  11. বাংলাদেশ
  12. বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
  13. বিনোদন
  14. বিশেষ সংবাদ
  15. বিশ্ব

শেখ হাসিনা সরকারের দের দশকঃ পাঠ্যপুস্তকের ভূত! উন্নয়ন, অপপ্রচার ও জাতির হৃদপিন্ডে আঘাতের ক্ষতচিহ্নের গল্প””!!

বার্তা কক্ষ
জানুয়ারি ১৫, ২০২৩ ২:৪৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সোহাগ চোকদার
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ১৯৭৫ এর কালোরাতে স্বপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে বীরের জাতি বাঙালীর গৌরবগাঁথা উন্নত মম শীর এর সাহসিকতার যে ইতিহাস বিশ্বকে কাঁপিয়ে তুলেছিলো, গোটা বিশ্বে বাঙালী জাতির যে মহিমান্বিত অর্জন ছিলো তা কালিমা আবৃত করে, কলঙ্কিত করে, বিশ্বে বাঙালী জাতিকে বেঈমান জাতির খ্যাতি এনে দিয়েছিলো। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কবর রচিত হয়েছিলো। বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী দুই দশকের আর্মি ডিকটেটরের অবৈধ সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ , ধর্মনিরপেক্ষতা, অসাম্প্রদায়িকতা মুছে দিয়ে, ৭১ এর পরাজিত অপশক্তি ও ৭৫ এর বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীচক্রকে সঙ্গে নিয়ে তাদেরকে পুণর্বাসিত করে, এমপি,মন্ত্রী, আমলা বানিয়ে খুশী করে স্বৈরাচরী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে পাকিস্তানী দালালদের এজেন্ডা কায়েমে কাজ করেছে। মেজর জিয়া যুদ্ধাপোরাধী ও বঙ্গবন্ধুর খুনীচক্রকে খুশী করতে এবং অবৈধ ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে পৃথিবীর জঘণ্যতম কালো আইন “ইনডেমনিটি”অধ্যাদেশ জারি করলো যাতে ৭৫ এর বঙ্গবন্ধু ও তার স্বজনদের হত্যা বিচার বাংলার মাটিতে যেনো না হয় !!!
যাই হোক মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় ১৯৭৫ এর সেই কালোরাতে বঙ্গবন্ধুর দুইকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রবাসে থাকায় বেঁচে গিয়েছিলেন। তাইতো বাংলার মানুষের বিপুল সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দের দশক ধরে আজ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সুদৃঢ় নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায়। দেশী বিদেশী সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ করে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সরকারের সামর্থ ও সাহসিকতার জানান দিয়ে বিশ্ব মোড়লদেরকে দম্ভকে নাড়া দিয়েছেন। মেট্রোরেল চলতে শুরু করেছে, মহাকাশে বহু আগেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সেট হয়ে গেছে। পানির তলদেশের সড়কপত পানিপথ বঙ্গবন্ধু টার্নেল শুঘ্রই যাত্রা শুরু করবে বৈকি! রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রেও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্যে তৈরী হচ্ছে। মাটির তলদেশ দিয়ে ছুটে চলবে ট্রেন সেই পরিকল্পনাও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার গড়া। এভাবে বঙ্গবন্ধুকন্যার হাত ধরে গড়ে উঠছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।
বিগত দের দশকের ভেতর চিহ্নিত কুখ্যাত যুদ্ধাপোরাধীদের বিচার কাজ যেমন সম্পন্ন হয়েছে পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের বিচার কার্জ শেষে বেশ কয়েকজনকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশে আত্মগোপনে থাকা মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত বাকি পলাতক আসামীদেরকে প্রবাস থেকে ধরে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করার প্রক্রিয়া চলছে। জাতীয় চারনেতা হত্যাকারীদেরকেও মৃত্যুদন্ডের সাজা দেয়া হয়েছে। এই তিনটি বিচার কার্য সম্পাদনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকার চেষ্টা করেছেন জাতির ললাটের কলঙ্ক মোচনের, জাতির পাপমোচনের।
অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুকন্যার উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করতে , বিতর্কিত করতে, একই সাথে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করতে সেই ৭১ ও ৭৫ এর অশুভ প্রেতাত্মারা তাদের উত্তরসূরিরা উঠে পরে লেগেছে। একদিকে তাদের ছদ্মবেশী অনুসারীদেরকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সহযোগী সংগঠনে সুকৌশলে ঢুকিয়ে দিয়েছে। সরকারের ভেতরেও মৌলবাদী পাকিস্তানপন্থীরা ঘাপটি মেরে মিশে আছে সরকারে।
লক্ষ করলে দেখা যাবে যে,১৯৭৫ পরবর্তী সময় থেকে ২০০৮ পর্যন্ত সময়ে আওয়ামী লীগের কঠিন দুঃসময়ে তৃনমূলে যারা জান জীবন বাজি রেখে আওয়ামী লীগকে আগলে রেখেছিলো , যক্ষ্মের ধনের মতো বুঁকে আকঁড়ে ধরে রেখেছিলো । খেয়ে না খেয়ে থেকে প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলো, আওয়ামী লীগের স্বর্ণযুগে তাদের কোনো অবস্থানই নেই। দলের পদ, বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন সিংহভাগই ভূইফোঁড় , সুবিধাবাদী, নব্য হাইব্রীড, অনুপ্রবেশকারীদের দখলে! বঙ্গবন্ধুর অবমাননা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিতে তাদের হৃদয়ে আঘাত করেনা!!
এই সুযোগে বিগত দের দশকে বহু সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটেছে, বহু হিন্দু বসতি আগুনে পোড়ানো হয়েছে। বহু হিন্দু ঘর বাড়ী দোকানপাটে লুন্ঠন করে আগুন দিয়ে জ্বালানো হয়েছে। এসবের যথার্থ বিচার আদৌ হয়েছে কি?
বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙ্গলো মৌলবাদীরা!! এক ঘটনায় ধর্ষণ বিরোধী মিছিলকারী তথাকথিত আন্দোলনকারীরা বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ছবি ভাংচুর করে আগুনে পোড়ালো! মুজিব কোট আগুনে পুড়িয়ে ছাই করলো!! আরেক ঘটনায় মৌলবাদীরা হিংস্র পশুর মতো বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে হামলে পরে লোহার সাবল দিয়ে আঘাত করে ক্ষত বিক্ষত করলো!! আমি হতভম্ভ হয়ে রইলাম, ওরা বঙ্গবন্ধুর উপর এতো ক্ষিপ্ত কেনো!? মানুষটিকে মেরেও ক্ষান্ত হলিনা!? আর এহেন ঘটনাগুলো ঘটলো তখন যে সময়ে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় , জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা রাষ্ট্রনায়ক এ সময়ে এহেন আঘাত !? বঙ্গবন্ধুর অবমাননা মানে গোটা বাঙালী জাতিকে অবমাননা, নয়কি!? এই সময়ে জাতির পিতার ম্যুড়াল ভাঙ্গার আর বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাংচুর আগুনে পোড়ানোর ঘটনায় আমার হৃদয়ের ক্ষতচিহ্ন মুছতে পারবে কি কেউ!? আমি অতি নগণ্য একজন মুজিব সৈনিক। ১৯৮৬ থেকে শুরু, ঐ কিশোর বয়সেই একশত নৌকা বানিয়ে জয়বাংলা শ্লোগান ধরি মিছিল করি, স্কুল ফাঁকি দিয়ে ঢাকার বকসীবাজারে ফুপুর বাড়ীতে বেড়াতে যাওয়ার নাম করে সেখান থেকে ফুপাতো ভাই লিখনকে নিয়ে সোজা টিএসসিতে। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করেছি, টি এস সি তে অগ্রজদের সাথে মিছিল করেছি, টিয়ার গ্যাস , রাবার বুলেট হজম করেছি। সঙ্গত কারনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুড়াল ভাঙার ফলে, বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ছবি ভাংচুর করে আগুনে পোড়ানোয় আমার হৃদয়ে আঘাতের যে ক্ষতচিহ্ন জন্মনিলো জানি তা কবর অবধি বয়ে বেড়াতে হবে বৈকি!
শুধু তাই নয় আমরা ঐতিহাসিক “মুজিবকোট” ও আগুনে পোড়াতে দেখেছি আওয়ামী লীগ সরকারের দের দশকের শাসনামলে! যতো বড় ঘটনাই ঘটুক না কেনো জাতির পিতা অবমাননা করে তার ছবি,ম্যুড়াল ভাংচূরের মতো ধৃষ্টতা, মুজিবকোট আগুনে পোড়ানোর মতো ধৃষ্টতা এই স্বাধীন বাংলায় থেকে খেয়ে!!! এহেন ধৃষ্টতার শেকড় উপড়ে ফেলতে না পারলে ভবিষতের পথে পথে বহু বাঁধা বিপত্তিতে হুমকিতে পতিত হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় তাই অশুভ অপশক্তি, পাকিস্তানের দালালরা কচ্ছপের মতো নিজেদেরকে লুকিয়ে রেখেছে। সময় সুযোগ পেলে ছোবল মারবেই যার জ্বলন্ত উদাহরণ অতি সম্প্রতি ঢাকাতে তাদের জঙ্গি মিছিল এবং মিছিল থেকে ইট পাটকেল ছূড়ে ১০ জন পুলিশ সদস্যকে আহত করার ঘটনা।
বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসি দেয়া হয়েছে, চিহ্নিত কতক যুদ্ধাপোরাধীদেরকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। তারাতো বসে থাকবে না। তাদের শেকড় , বাকড় ডালপালা,লতাপাতাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিষাক্ত রক্ত, প্রতিশোধের অনলে পুড়ছে গভীরে, বিষয়টাকে হালকাভাবে নিলেই চলবে না। আর ৭১ ও ৭৫ এর অশুভ শক্তিদের দোসর রয়েছে অগণিত , অপরিচিত, তারা কে কখন কোন ছদ্মবেশে অগাধ টাকার লগ্নি দিয়ে কার মাধ্যমে যে সরকারী চাকুরীতে , আওয়ামী লীগের সংগঠনের কোনো এক স্তরে অনুপ্রবেশ করবে অথবা ইতিমধ্যে অনুপ্রবেশ করে থাকলে তার সঠিক তথ্য কে জানে?
১৫ জানুয়ারী একাত্তর টিভিতে একটি প্রতিবেদন দেখলাম, ইসলামী ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে নিয়ে গেছে জামায়াত-শিবির চক্র!!
জামায়াতের প্রধান পৃষ্ঠপোষক যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলা শীর্ষ যুদ্ধাপোরাধী জামাত নেতা মীর কাশেম আলীর ব্যবসায়ী পাটনার সহচর এক কালের শিবির নেতা হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের মূল হোতা!! ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ বদলালে কি হবে তারা সুকৌশলে যোগসাজশ করে বেনামে ব্যাংক থেকে ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে নিয়ে গেছে! নিয়ে যাচ্ছে!! এটাই হলো বাস্তবতা।
পাঠ্যবইয়ে তো ইতিহাস বিকৃতি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রবন্ধে বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার, ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের কথা, ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক মহান স্বাধীনতার ঘোষণার কথা সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়নি! আর বর্তমান সরকারের উন্নয়নচিত্রের কথা বর্ণনা না করে উল্টো এ সরকারের সময়ে রাজনৈতিক হতাশা, বেকারত্ম, যুকরা বেপরোরা , বিপথগামী , অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত রয়েছে, তারা “রাজনৈতিক নেতাদের ডান হাত” ! এহেন অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্যে “ধর্ম ও শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়ে তাদের সামন থেকে অন্ধকার দূর করতে হবে” এমন সব বক্তব্য “বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ” / “আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম” নামক প্রবন্ধে লেখা হয়েছে!
বিভিন্ন বেসরকারী গাইড বইয়ে এমন একাধিক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রবন্ধ পড়েছি যেখানে বঙ্গবন্ধুর নামটিই লেখা হয়নি! এসবও বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতা বিরোধীদেরই কাজ। আমার দেশে থেকে খেয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিরোধী চক্র, বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ বিরোধী গোষ্ঠী যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় তখন সরকারের নাকের ডগা দিয়ে কি করে করছে !? সেটাই আমার জিজ্ঞাসা।
এগুলো লিখছে কারা,প্রকাশ করছে কারা! আর এমনসব গাইড বই এমপিও ভূক্ত বিদ্যালয়ে পাঠ্য সহায়িকা হিসেবে টাকার বিনিময়ে পড়াতে দেওয়া হচ্ছে ! এই চক্রূর লোকজন কারা!! শিক্ষামন্ত্রী বা মন্ত্রণালয়, বা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী,তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদকগণ কখনো এগুলোর অনুসন্ধান করেছেন কি? খোদ যখন সরকারী পাঠ্যপুস্তকে৭১ এ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়ার কথাটি লেখা হয়নি !
যেমন চলতি ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের নবম-দশম শ্রেণির “বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি” বইয়ের ১৯৩ /৯৪/৯৫/৯৬ নং পৃষ্টায় লেখা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রবন্ধের ১৯৪ পৃষ্টার দ্বিতীয় প্যারা “স্বাধীনতার ডাক: লেখা হয়েছে “২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার লিখিত ঘোষণাপত্র দিয়ে যান। ২৬ মার্চ দুপুরে এম এ হান্নান চট্টগ্রামের কালুর ঘাটের স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন”!! প্রকৃত সঠিক তথ্য হলো ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাক বাহিনীর হাতে গ্রেফতারের পূর্ব মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এবং বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ঘোষিত স্বাধীনতা ঘোষণার লিখিত ঘোষণা পত্রটি চট্টগ্রামে প্রেরণ করা হয়, পরদিন সকালে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান চট্টগ্রামের কালুর ঘাটের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর লেখা “কারাগারের রোজনামচা” বইয়ের ২৫ জানুয়ারী -২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার লেখা ভূমিকাতে , বইয়ের ৭নং পৃষ্টায় লেখা হয়েছে “২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। এই ঘোষণার সাথে সাথেই পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী তাঁকে ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়ী থেকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যায় এবং কারাগারে বন্দী করে রাখে”
এখন আমার জিজ্ঞাসা
“১৯৭১ এর ২৫ মার্চের দিবাগত রাতের অর্থাৎ ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা করেন”
এই কথাটি এমন স্পষ্টভাবে সরকারী বোর্ড বইতে, বেসরকারী গাইড বইতে লেখা হচ্ছে না কেনো!?
অন্যদিকে ২০১৮ সালে বেসরকারী পুস্তক প্রকাশনী “মেজর পাবলিকেশন্স ( ৩৪ নর্থব্রুক হল রোড,মাদরাসা মার্কেট ২য় তলা বাংলাবাজার ঢাকা-১১০০) থেকে প্রকাশিত অষ্টম শ্রেণির জন্য, গাইড বই ” মেজর জে এস সি বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি বইয়ের প্রবন্ধ অংশে ৮১০/১১/১২ ও ১৩ পৃষ্টা জুড়ে লেখা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক হাজার শব্দে লেখা প্রবন্ধ “বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ” এ ১০০০ শব্দের মধ্যে একবারের জন্যেও বঙ্গবন্ধুর নামটিই লেখা হয়নি!! ৭ মার্চের ভাষণ, অপারেশন সার্চ লাইট, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা এসব উল্লেখ্য ই করা হয়নি!! একই বইতে লেখা “স্বাধীনতা দিবস” নামক প্রবন্ধে লেখা হয়েছে ” বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস।১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিলো”!
এই প্রবন্ধেও একটি বারের জন্যেও বঙ্গবন্ধুর নাম লেখা হয়নি!! এখন প্রশ্ন হলো স্বাধীনতা ঘোষণা করলোটা কে তা কিন্তু বোর্ড বই, বেসরকারী বেশ কয়েকটি বইয়ের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রবন্ধে আদৌ সুস্পষ্ট করে লেখা হচ্ছে না !!! কিন্তু কেনো !? তা খতিয়ে দেখতে হবে। উল্লেখ্য মেজর পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত ৬ষ্ঠ থেকে নবম-দশম শ্রেণির জন্যে লেখা গাইড বইগুলো ( প্রতিটি বিষয়ের) দাম ২০০০/২৫০০ টাকা করে ফুল সেট কেনার জন্যে বিদ্যাদয় থেকে বুকলিষ্ট নামের কাগজ ধরিয়ে দিয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীদেরকে বাধ্যতামূলক কিনে আনতে বলা হয়েছিলো, সবাই কিনেছেও। বিদ্যালয়ে মেজর গাইড পাঠ্য করতে শিক্ষক প্রতিনিধিদের দুজনকে আলাদাভাবে ১ লক্ষ টাকা এবং শিক্ষকদের ও বিদ্যালয়ের ডোনেশনের নামে প্রায় ৪/৫ লক্ষ টাকা দেয়া হয়েছে বলে শিক্ষানুরাগী মহলে চাউর হয়েছিলো। তৎকালীন বিদ্যালয়ের দুজন টি আর ই ছিলেন সরাসরি বিএনপির লোক। একজনতো বিএনপির সুসময়ে ছাত্রদলের ইউনিয়ন সভাপতি ছিলেন। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক কখনোই বইয়ের ভেতর হাত বুলিয়ে না দেখলেও টাকার ভাগ ছাড়েননি!! এসব বিষয়গুলো খোঁজ নিলে সহজেই জানা যায় বৈকি।
সেক্ষেত্রে পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, লেখক ও সম্পাদনা পরিষদ ও প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান কার উপর এই দায় বা ভুল বর্তায়!? আমি গত দের দশক ধরেই পাঠ্যপুস্তকে জামাত-বিএনপি-পাকিস্তানী ভূত দেখতে পাচ্ছি। তো বড় বড় নেতা মন্ত্রী , আমলা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে এগুলো এলোনা কেনো?
এ বছরের পাঠ্যপুস্তক নিয়েও চলার পথে দুটি কথা শুনলাম ১৮/২০ বছর বয়সী একজন যুবক এক দোকানে সদাই কিনতে এসে আমাদের মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বলছে “এ বছর সব ক্লাসের ইসলাম ধর্মের বই তুলে দিয়েছে!! আর ক্লাস থ্রি ফোরের পাঠ্যবইয়ে “গরু আমাদের মা” নামে গল্প লেখা হয়েছে!!
শুনে আমি বললাম আপনি নিজে দেখেছেন !? বললো না ছাত্ররা বলেছে! তা কোন স্কুলের? তিনি চেনেন না, আমি বললাম নিজে চোখে দেখেন নাই ,পড়েন নাই তা শুনেই প্রচার শুরু করলেন !? আপনি দাঁড়ান আমি খোঁজ নিয়ে এক্ষুণি জানাচ্ছি বলেই আমি একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহোদয়কে ফোন দিয়ে ঘটনার সত্যতা জানতে চাইলে শিক্ষক মহোদয় বললেন এখনো পুরোপুরি বই স্কুলে আসেনি, তবে এটি অপপ্রচার , আপনাকে কে বললো?
কথা বলার কোন এক ফাঁকে ঐ যুবক ঔধাও!!
আজ ষষ্ঠশ্রেণির ইসলাম ধর্ম শিক্ষা বই হাতে পেলাম। “ইসলামী শিক্ষা” নামে ষষ্ঠশ্রেণির ইসলাম ধর্ম শিক্ষা গ্রন্থে ইসলাম ধর্মের মৌলিক শিক্ষাগুলো সহ ঈমান,আকাঈদ, তাওহীদ, আখলাক, কোরআন হাদীসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও অবশ্যিক শিক্ষণীয় বিষয়গুলোর পাশাপাশি আমাদের শেষ নবী (সাঃ) হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) জীবন নিয়ে বিশদ বর্ণনা করা হয়েছে। হযরত আবুবক্কর ছিদ্দিক (রাঃ) হযরত খাদিজা (রাঃ) , ঈমাম আবু হানিফা (রহঃ). হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ)এর জীবনকর্ম, নামাজ ,রোজা সহ অবশ্য পালনীয় ইসলামের বিষয়াবলী, মাতা পিতার প্রতি কর্তব্যপালন, গীবত, পরনিন্দা, সহ নানা বিষয়াবলী, সূরা ফাতিহা সহ কয়েকটি সূরা ও তার বর্ণনা সন্নিবেশিত করে খুবই চমৎকারভাবে ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষার শিক্ষণীয় নানাদিক তুলে ধরা হয়েছে। ! কে একজন চলার পথে বলে গেলেন যে “সরকার বিদ্যালয় থেকে ইসলাম শিক্ষা বই উঠিয়ে দিয়েছে” আর আমরা কোন প্রকার সত্যতা যাচাই না করে, খোঁজ খবর না নিয়েই সেই অপপ্রচারের ডালপালা বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিচ্ছি দিকবিদিক!! এই হলো আমাদের অবস্থা!! এহেন অপপ্রচারকারীরাই মৌলবাদী বা তাদের দোসর, মুক্তিযুদ্ধ ও শেখ হাসিনা সরকার বিরোধী অশুভ চক্র।
সবাই আছে আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে টেন্ডারবাজী করতে, নেতা হতে, নৌকার মনোনয়ন বাগিয়ে চেয়ারম্যান, মেয়র, এমপি, মন্ত্রী হতে।
বঙ্গবন্ধুর ম্যুড়াল ভাঙ্গলে যাদের হৃদপিন্ডে আঘাত লাগেনা, বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচূর করলে আগুনে পোড়ালে যাদের ধমণীতে প্রতিবাদ প্রতিশোধের অনল জ্বলে উঠে না !!! তারা আদৌ আওয়ামী লীগার নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী নয়, দেশপ্রমিক নয়, জয় বাংলার লোক নয়।
পাঠ্যপুস্তক থেকে পাকিস্তানী ভূত তাড়াতেই হবে, দেশ থেকে সাম্প্রদায়িকতার শেকড় উপড়ে ফেলতে হবে। আওয়ামী লীগে শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে স্বার্থান্বেষী সুবিধাবাদী এবং মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী চেতনাধারীদেরকে বের করে দিতেই হবে। তবেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে আর কোনো প্রতিবন্ধকতাই থাকবে না।

দৈনিক এরোমনি প্রতিদিন ডটকম তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন অনলাইন নিউজ পোর্টাল