ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কালো পতাকা উত্তোলিত হয়নি কওমী মাদ্রাসা সহ বেসরকারী ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে!!!
সোহাগ চোকদার :
মহান ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমাদের মহান স্বাধীনতার বীজ বপন করা হয়েছিলো। পরাধীন বাঙালী জাতির হৃদয়ে স্বাধীনতার স্বপ্নসাধ জেগেছিলো। যার ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ এর মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা বিশ্ব মানচিত্রে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি পেয়েছি লাল সবুজ পতাকা। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারীতে মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনের চূড়ান্ত দিনে শাসক গোষ্ঠীর লেলিয়ে দেওয়া পুলিশের বুলেটের আঘাতে প্রাণ হাড়ায় সালাম, রফিক, শফিউর, বরকত জব্বাররা। তাদের আত্মত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে মাতৃভাষা বাংলার অধিকার আদায় হয়। ভাষা শহীদদের যথাযথ মর্যাদায় সম্মান জানাতে তাদের স্মরণে একুশে ফেব্রুয়ারী জাতীয় ছুটির দিন এবং দিনটিতে দেশের সকল সরকারী বেসরকারী সমস্ত প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়। একই সাথে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারী বেসরকারী অফিস আদালত, কল কারখানা শিল্প প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, হাঁট বাজারের দোকানপাটে, ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়, জাতীয় পতাকা অর্ধ নমিত করে উত্তোলন করা হয়। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খুব সকালে বুঁকে কালোব্যাজ ধারণ করে প্রভাতফেরীতে অংশ নেয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে ভাষা দিবসের উপর আলোচনা সভা, কবিতা ছড়া আবৃত্তি ও রচনা লেখা, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা সহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালনের মধ্য দিয়ে গোটা জাতি যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান ভাষা শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসটি উদযাপন করে থাকে। বর্তমানে একুশে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পেয়েছে, তাই সারা পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষজন পৃথিবীর প্রতিটি দেশে সকল জাতি একুশে ফেব্রুয়ারী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে থাকে।
অথচ আমার দেশের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত কতক ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অমর একুশে ফেব্রুয়ারী পালন করে না! সারাদেশের কওমী মাদ্রাসাগুলোতে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয় না!! শিক্ষার্থীরাও কিলোব্যাজ ধারণ করে না! ব্যক্তি অর্থায়নে সারাদেশের আনাচে কানাচে হাজার হাজার বেসরকারী মাদ্রাসা গড়ে উঠেছে। এসব মাদ্রসাগুলোতেও একুশে ফেব্রুয়ারীর মহান ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়নি!! অথচ বছর কয়েক আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কওমী মাদ্রাসাগুলোকে সরকারী সকল সুযোগ সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাদের শিক্ষা সনদ সরকারীভাবে দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। করোনা মহামারী কালীন দেশের প্রায় দুইলক্ষ মাদ্রাসা শিক্ষকদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভাতা দিয়েছেন। সারাদেশের সকল মসজিদের নিবন্ধিত ঈমাম সাহেবদের করোনা ভাতা ঈদের ভাতা দিয়েছেন।সারাদেশে ৫৭০ টি মসজিদ করে দিচ্ছেন। এছাড়াও দেশের অন্যান্য সকল মসজিদ উন্নয়নে নিয়মিত জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ থেকে অনুদান দেয়া হচ্ছে। কওমী মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড নিয়ন্ত্রণকারী দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম ওলামাগণ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে “কওমী জননী” উপাধী দিয়েছেন। অথচ পালন করা হচ্ছে না আমাদের জাতির গভীর বেদনার দিন মহান একুশে ফেব্রুয়ারী!!
সরেজমিনে একটি মাদ্রাসায় গিয়ে দেখলাম শুধু জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে তাও অর্ধ নমিত করে নয়! ঊর্ধে উচ্তোলন করা হয়েছে! এটা অজ্ঞতা? না অবহেলা!?কালো পতাকাতো উত্তোলনই
করা হয়নি! কওমী মাদ্রাসা ও এতিমখানাগুলো এলাকার সামর্থশালীদের দেয়া আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত হয়। প্রতি বছর মাদ্রাসা কমিটি কোরবানীর চামড়া সংগ্রহ করে বিক্রি কর সেই অর্থ দিয়ে মাদ্রাসার ব্যয় করে থাকেন। বিভিন্ন মানুষ সেচ্ছায় মাদ্রাসায় অনুদান দিয়ে থাকে। আবার সামর্থশালীদের কাছ থেকে অনুদান সংগ্রহের অর্থ দিয়ে এতিমখানা কওমী মাদ্রাসাসহ বেশীরভাগ বেসরকারী মাদ্রাসাগুলোর বাৎসরিক ব্যয় নির্ভর করে। মাতৃভাষা বাংলাটাতো আমাদের সকলেরই । মাদ্রাসার শিক্ষক শিক্ষার্থী অভিভাবক ও যাদের দান অনুদানে মাদ্রাসা পরিচালিত হচ্ছে তারা সকলে কি বাংলাভাষী নয়!? কমিটিতে যারা আছেন তারা কি বাঙালী নন!?মাদ্রাসার শিক্ষক শিক্ষার্থী ও পরিচালনা কমিটির কর্তাব্যক্তিদের মাতৃভাষা কি বাংলা নয়!? বাংলাদেশ কি তাদের মাতৃভূমি নয়!? যেখানে রাষ্ট্রের ভেতর প্রতিষ্ঠিত ভিনদেশী প্রতিষ্ঠানকেও ঐ রাষ্ট্রের জাতীয় দিবস গুলোতে সম্মান জানিয়ে জাতীয় ও কালো পতাকা উত্তোলন করতে হয়। যেখানে দেশের সকল রাজনৈতিক দল, মত ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে মহান একুশে ফেব্রুয়ারীর অমর দিনটিকে সমানভাবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে থাকে,সেখানে আমার দেশের মাদ্রাসাগুলোর অনিহা অবহেলা কেনো!? রাষ্ট্রীয় শোক দিবসগুলোতে তারা কেনো কালো পতাকা উত্তোলন করে না!?
দৈনিক এরোমনি প্রতিদিন ডটকম তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন অনলাইন নিউজ পোর্টাল