সোহাগ চোকদার :
১৫ আগস্ট, ১৯৭৫, পৃথিবীর ইতিহাসে জঘণ্যতম
বরর্বোরিত হত্যাকান্ড সংগঠিত হলো। একটি সদ্য স্বাধীন জাতি তাদের রাষ্ট্রের স্থপতিকে, পিতাকে স্বপরিবারে হত্যা করলো! স্তম্মিত হলো বিশ্ব বিবেক, বিস্মিত হলো বিশ্ববাসী ! হ্যাঁ আমি বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত মহান নেতা, বিশ্বের নীপিড়িত নির্যাতিত মানুষের সংগ্রামী চেতনা “বঙ্গবন্ধু” হত্যাকান্ডের কথাই বলছি। আমরা যেদিন বাঙালীর রাখাল রাজা, বিশাল হৃদয়ের ছাপ্পানো হাজার বর্গমাইলের সুবিশাল দেহের বাংলাদেশকে হত্যা করি, সেদিন সৌভাগ্যক্রমে প্রবাসে থাকায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন পিতা মুজিবের অতি আদর সোহাগের “হাসুমনি ও ছোট কন্যা রেহানা। প্রবাসে থেকে পিতা মাতা ভাই স্বজন হারানোর কথা শুনে কতটা সাইক্লোন ঝড় বঙ্গবন্ধুর জৈষ্ঠ্য সন্তান শেখ হাসিনা’র বুঁকে আঘাত হেনে তার ভেতরটাকে দুমড়ে মুচড়ে তছনছ করে দিয়েছে? তা অনুভব উপলব্ধি করার মতো শক্তি পৃথিবীর কোনো মানুষের ছিলো বা আছে বলে মনে করি না। শেখ হাসিনা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর গাইড, অনুপ্রেরণা, শেখ হাসিনা ছিলেন পিতা মুজিবের সংগ্রামী রাজনৈতিক জীবনের পথচলার আলোকবর্তিকা। বঙ্গবন্ধু জেলে থেকে তার “হাসুমনি”কে চিঠি লিখতেন বাহিরের সবকিছু, সংসারের সবাইকে সামলে নিতে। শেখ হাসিনা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর একান্ত ভরাসাস্থল। উভয়ে উভয়ের পরামর্শদাতা,বন্ধু বিশ্বাস ভালোবাসা সাহস , অনুপ্রেরণা ও আবেগের আত্মজা।
আমরা হারিয়েছি জাতির পিতাকে, আর কন্যা মুজিব তার শুধু তার পিতাকে নয়, তিনি হারিয়েছেন আত্মিক,মানসিকভাবে সর্বস্ব। সর্বস্ব হারানো বঙ্গবন্ধুর হাসুমনি প্রবাসে দূর্বিসহ জীবনযাপন করেছেন। বলা যায় এক রকম যাযাবর মৃতপ্রায় মানুষের মতো নিঃস্ব, নিস্তব্ধ হয়েই তিনি বেঁচে ছিলেন।
আমি মনে করি, প্রকৃতঅর্থে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে মহান সৃষ্টিকর্তা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সৃষ্ট অপশক্তি, যুদ্ধাপরাধী, অবৈধ শাসক শোষকদের কবল থেকে, স্বৈরাচারের কবল থেকে, দেশী বিদেশী সকর অগণতান্ত্রিক অশুভ শক্তির রাহুগ্রাস থেকে জাতিকে মুক্ত করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের জন্যে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তার হাজার বছরের নীপিড়িত অবহেলিত নির্যাতিত জাতিকে অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিকভাবে মুক্তির স্বপ্নসাধে, যে দীপ্ত প্রত্যয়ে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে বাঙালী জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন, পিতা মুজিবের স্বপ্নসাধ পূরণের জন্য তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যেই শেখ হাসিনার বেঁচে থাকাটা অনিবার্য ছিলো বৈকি।
প্রবাসের দূর্বিসহ জীবনযাপন শেষে ১৯৮১ সালের ১৭ই মে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরলেন। বাঙালীর ভাগ্যাকাশে রক্তিম সোনালী সূর্য উদিত হলো।
শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসেছিলেন বুঁকের ভেতরে ব্যথার হিমালয় চাপা দিয়ে। বঙ্গবন্ধুকন্যা
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে একদিকে যেমন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে প্রাণ সঞ্চারিত হয়েছিলো, পুণর্জ্জীবন ফিরে পেয়েছিলো দ্বিধা বিভক্ত বঙ্গবন্ধুর সৈনিকরা, সারাদেশের ঝিমিয়ে পরা তৃনমূলের নেতাকর্মীরা।অন্যদিকে গণতন্ত্রকামী, সুশাসন প্রত্যাশী গণমানুষের মাঝে স্বাধীনতার সুফল ভোগের, ব্যক্তি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা , অধিকার আদায়ের আশা ও সংগ্রামী চেতনা জাগ্রত হয়েছিলো।
তাইতো শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরবর্তীতে আমরা দেখতে পাই যে, দেশে ফিরেই তিনি শেখ হাসিনা থেকে জননেত্রী হয়ে যান। জনমানুষের নেত্রী হয়ে তিনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরকে সুসংগঠিত করে। দেশের সর্বস্তরের সকল শ্রেণিপেশার মানুষদেরকে কাছে টেনে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে
জেল জুলুম মৃত্যুভয়কে জয় করে এক দশকের সফল আন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে নিজেকে গণতন্ত্রের মানসকন্যা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। পঁচাত্তর পরবর্তী অবৈধ শাসনের অবসান ঘটিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সুবাতাস এনেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাই। আর একটানা দের দশকের আওয়ামী লীগের শাসনামলে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রকৃতভাবেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় রূপান্তরিত হয়েছে বটে। বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী দের দশকের অবৈধ সরকাগুলোর এবং স্বৈরাচারের পতন পরবর্তী সেচ্ছাচারী ও যুদ্ধাপরাধী পাক প্রেতাত্মা সরকারের সময়ে, দুইভাগে দশ বছরে উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে গিয়েছিলো কয়েশ বছর! দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের অপবাদ নিয়ে খাদের কিনারে পড়ে যাওয়া পতিত বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে টেনে আনা ও উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার রূপকল্পের রূপকথার রূপকার, রাজকন্যা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। স্বাধীনতা পরবর্তী চারভাগে ২৫ বছরের দুঃসাশন, লুটপাট,দুর্নীতি দেশকে ,দেশের গোটা অর্থনীতিকে ধ্বংস্তুপে পরিনত করেছিলো পশ্চিমা ও পাকি দালাল সেচ্ছাচারী অবৈধ অগণতান্ত্রিক সরকারগুলো। দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনে, জনগণের কাছে জবাবদিহিতা মূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করে, সুশাসন ব্যবস্থার অবকাঠামো গড়ে তুলে, এবং আমরা যা কিছু কল্পনাও করিনি, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, মেট্রোরেল, পদ্মাসেতু, কর্ণফুলী বঙ্গবন্ধু টার্নেল, পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ফ্লাইওভার, হাইওয়ে মহাসড়কের মতো বিশ্বের উন্নত দেশের ন্যায় মেগা মেগা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বর্তমানে উন্নয়নে বিশ্বের রোল মডেল। এবং দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন নয়, সুশাসন,সততা ও উন্নয়নের বিচারে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বিশ্বের তৃতীয় শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক। তাইতো বলি “
তোমার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, করেছে
জাতির ভাগ্যের পরিবর্তন”।
দৈনিক এরোমনি প্রতিদিন ডটকম তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন অনলাইন নিউজ পোর্টাল