মনসুর আলম খোকন,সাঁথিয়া :
এক সময়ের খরস্রোতা আত্রাই নদী পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুর হাটের কাছে এসেই পুরোপুরি উধাও হয়ে গেছে।নদীর এই অংশ দখল করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান,শত শত অবৈধ স্থাপনা।এমনকি এসব স্থাপনায় নির্বিঘ্নে যাতায়াত ও ব্যবসা পরিচালনার জন্য নদীর এপাড়-ওপাড় গড়ে তোলা হয়েছে চওড়া,পাকা রাস্তা।সেই রাস্তারও দুই পাশে গড়ে উঠেছে অনেক দোকানপাট।এতে এই স্থানে প্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে নদীটির অস্তিত্বই একেবারেই বিলীন হয়ে গেছে।
জানা গেছে,আত্রাই নদীর উৎপত্তি সাঁথিয়া উপজেলার নন্দনপুর ইউনিয়নে ইছামতী নদী থেকে।এরপর এটি সাঁথিয়া,বেড়া ও সুজানগর উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বেড়া উপজেলার মাসুন্দিয়া ইউনিয়নে বাদাই নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে পদ্মায় গিয়ে মিশেছে।উপজেলার কাশিনাথপুর বাজারের কাছে নদীটিকে পুরোপুরি ভরাট করায় এর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ আর নেই।তবে নদীর উৎসস্থল থেকে মোহনা পর্যন্ত বাকি অংশ স্রোতহীন ও বদ্ধ জলাশয় অবস্থায় কোনোরকমে টিকে আছে।অথচ এলাকাবাসীর ভাষ্য,নব্বই’র দশকে এই নদী দিয়ে চলাচল করতো বড় বড় নৌকা,হতো নৌকা বাইচ। এই নদীতে পাওয়া যেতো ইলিশসহ নানা রকম সুস্বাদু মাছ। সরেজমিনে ঘুরে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়,কাশিনাথপুরের অবস্থান পাবনার সাঁথিয়া,বেড়া ও সুজানগর উপজেলার সংযোগস্থলে। পাবনা-ঢাকা মহাসড়কের পাশে অবস্থিত হওয়ায় ওই স্থানটি পাবনা জেলার অন্যতম ব্যবসাকেন্দ্রে পরিণত হয়ে উঠেছে।তবে দখলের স্থানসহ ব্যবসাকেন্দ্রের বেশিরভাগ অংশ পড়েছে সাঁথিয়া উপজেলার মধ্যে।জেলার অন্যতম ব্যবসাকেন্দ্রে পরিণত হওয়ার কারণে কাশীনাথপুর হাটের পার্শ্ববর্তী এলাকার জায়গার দাম আকাশচুম্বী হয়ে পড়েছে।এতে স্থানীয় প্রভাবশালীরা লোভ সংবরণ করতে না পেরে নদীর জায়গা ইচ্ছেমতো দখল করার মহোৎসবে মেতে উঠেছে।কাশিনাথপুর ট্রাফিক মোড় থেকে হাটের শেষ সীমানা পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার দখলে নিয়ে নদীর দুইপাড়,আবার কোথাও কোথাও পুরো অংশজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল ভবনসহ শতাধিক পাকা ও আধাপাকা স্থাপনা।বেশিরভাগ স্থাপনাতে রয়েছে দোকান,ক্লিনিকসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।শতাধিক স্থাপনা হলেও দখলকারী ২৫/৩০ জন বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।দখল হওয়া অংশের মধ্যে কাশিনাথপুর হাটসংলগ্ন অংশে নদীর কোনো অস্তিত্ব নেই।এই অংশে নদের মাঝখানে তৈরি করা হয়েছে একটি ছোট সেতু।এর দু’দিকে নদীর এপাড়-ওপাড় পর্যন্ত পাকা সড়ক। প্রশাসনের নজরদারির অভাব ও আইনের প্রয়োগ না থাকায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা নির্মাণ করেছে অসংখ্য বহুতল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন।এইস্থানে এসে কারোরই বোঝার উপায় নেই যে,এক সময় এখানে একটি খরস্রোতা নদী ছিল।কী পরিমাণ জায়গা দখল হয়েছে,সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য নেই স্থানীয় প্রশাসনের কাছে।স্থানীয়রা আরও জানান,দখলের মহোৎসব শুরু হয় ২০০৩ সালের দিকে।ওই সময় সুজানগর উপজেলার আহম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন মিয়ার উদ্যোগে সরকারি অর্থে আত্রাই নদীর ওপর সেতু ও পাকা রাস্তা নির্মিত হয়।এলাকাবাসীর অভিযোগ,রাস্তা নির্মাণের পরপরই তিনি রাস্তার দুই পাশে সাত/আটটি দোকান গড়ে তোলেন।আর তারপর থেকেই দখলের হিড়িক পড়ে যায়।এ ব্যাপারে প্রয়াত জালাল উদ্দিনের ছেলে ও সেখানকার ব্যবসায়ী মো.আলামিন মিয়া জানান,নদীর পাড়ে থাকা তাদের নিজস্ব জমিতেই তারা দোকানপাট গড়েছে।তবে কাশিনাথপুর মৌজা অংশে সামান্য কিছু সরকারি জায়গা তাদের দখলে থাকতে পারে।সরকারি নির্দেশ পাওয়ামাত্রই তারা সে অংশ ছেড়ে দেবে।আর প্রায় ২০ বছর আগে তার বাবা ইউপি চেয়ারম্যান থাকাকালে নদীতে সেতু ও রাস্তা হয়েছিল।তখন তিনি ছোট ছিলেন।তার জানামতে সরকারিভাবে ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে এই রাস্তা ও সেতু নির্মাণ হয়েছে।নদীর ওপর নির্মাণ করা সড়কের দুই পাশে যে দোকানগুলো গড়ে উঠেছে সেগুলোর চার/পাঁচটির ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,দোকান ভাড়া নিয়ে তারা ব্যবসা করছে। নদী দখল করে এগুলো গড়ে তোলা হয়েছে কি না সে ব্যাপারে তারা জানে না।স্থানীয় পাঠাগার ও পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা বেড়া মাশুমদিয়া কে.জে.বি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক মো.আলাউল হোসেন বলেন,দখলের কারণে স্রোতস্বিনী আত্রাই নদী কাশিনাথপুরে এসে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।আমরা আত্রাইকে রক্ষায় বিভিন্ন সময়ে দাবি জানিয়ে এসেছি।এখন সরকারি উদ্যোগ আশা করছি।সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ হোসেন জানান, আত্রাই নদী রক্ষার ব্যাপারে আমাদের একাধিক মিটিং হয়েছে।ইতিমধ্যেই আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের যুক্ত করে এ ব্যাপারে ছয় সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছি।কমিটি সিএস,এসএ,আরএস রেকর্ড পর্যালোচনার পাশাপাশি অতীত ও বর্তমান অবস্থা যাচাই করে প্রতিবেদন দাখিল করলে তা নদী রক্ষা কমিশনে পাঠানো হবে। তবে নদী দখলের এই বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দেখছি বলে তিনি জানান।
দৈনিক এরোমনি প্রতিদিন ডটকম তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন অনলাইন নিউজ পোর্টাল