প্রিন্ট এর তারিখঃ মে ৯, ২০২৫, ৯:৩৯ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ অক্টোবর ২৫, ২০২৩, ৭:২০ পূর্বাহ্ণ
মাঠ প্রস্তুত করার পর বীজ রোপণ করতে হবে

মনসুর আলম খোকন
নতুন কারিকুলাম বাতিলের দাবিতে রাজধানীতে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমেছেন।তারা এ লক্ষ্যে মানবন্ধন করেছেন।গণমাধ্যম ও সোশাল মিডিয়ায় এ নিয়ে তুমুল ঝড় বইছে।সারাদেশের অভিভাবকরাই এই পরীক্ষাবিহীন শিক্ষাব্যবস্থা চাচ্ছেন না। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ) আয়োজিত এক আলোচনাসভায় কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এই নতুন কারিকুলাম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন? তিনি বলেছেন,এই কারিকুলামের ব্যাপারে পার্লামেন্টে আলোচনা হয়নি।এমনকি কেবিনেট মিটিংয়েও কোন আলোচনা হয় নি। তিনি শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন,আপনারা এতো আন্দোলন করেন?অথচ এই কারিকুলামের ব্যাপারে কোন কোনকিছুই করলেন না?এই দেশে সৃজনশীল নামক শিক্ষা শিক্ষাব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়ারও কঠোর সমালোচনা করেন তিনি। ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের বাংলাদেশে বাস্তবায়ন মোটেও সম্ভব নয় বলেই আমি মনে করি।কারণ,ফিনল্যান্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে মেধাবীরা শিক্ষকতায় আসেন,আর আমাদের দেশে কারা আসেন? তাছাড়া যারা আসেন তাদের কিভাবে ট্রিট করা হয়?এদেশে স্কুল শিক্ষকদের সেলারী কতো দেয়া হয়?বেসরকারি শিক্ষকদের দুটো পেশা থাকতে হয়,তা না হলে তিনি তার পরিবার চালাতে পারবেন না। একবার হুমায়ুন আহমেদ তাঁর একটা লেখায় একটি চরিত্র সম্পর্কে বলেছিলেন,তিনি একজন বেসরকারি কলেজের শিক্ষক,আবার বিকেলে তিনি ফার্মেসির ব্যবসা করেন।কোনটা যে তার আসল পেশা,বুঝা মুশকিল?এভাবে যদি শিক্ষক তার সত্ত্বা বহুবিধ জায়গায় বিক্রি করে দেন,তাহলে তার সবটুকু শিক্ষকতা ক্লাসে ছাত্রদের ঢেলে দিবেন কিভাবে? সরকারি শিক্ষকরাও খুব একটা ভালো নেই।ফিনল্যান্ডের সবচেয়ে মর্যাদাবান ও আকর্ষণীয় পেশা শিক্ষকতা। আর আমাদের দেশে সবচেয়ে অবহেলার পেশা শিক্ষকতা। ফিনল্যান্ডের জনসংখ্যা ৬০ লাখ। আর আমাদের প্রায় বিশ কোটি। ফিনল্যান্ডে জিডিপির কতো অংশ খরচ করে,আর আমরা কতো খরচ করি? ফিনল্যান্ডে ১২ জন ছাত্রের জন্য ০১ জন শিক্ষক। আর আমাদের দেশেরটা সবাই জানেন। ফিনল্যান্ডে ক্লাসে ছাত্র থাকে ১৮ জন আর আমাদের ক্লাসে থাকে শতাধিক। আমাদের একেকটি ক্লাস রাজনৈতিক জনসভা বা ওয়াজের ময়দানের মতো। ফিনল্যান্ডের বাবা-মায়েরা সচেতন ও ধনী। যেকোন ব্যয় তারা বহন করতে সক্ষম। রাষ্ট্রও প্রচুর ব্যয় বহন করতে পারে। ফিনল্যান্ডের কালচার আর আমাদের দেশের কালচার এক না। ফিনল্যান্ড কেইস আর বাংলাদেশ কেইস এক করতে হলে,
নিচের কাজগুলো করতে হবে। তারপর এই কারিকুলাম চালু করেন। শিক্ষার সব খরচ রাষ্ট্র বহন করবে। সবচেয়ে মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আনতে হবে। শিক্ষকতা পেশা সবচেয়ে মর্যাদাবান করা হোক। শিক্ষকদের বেতন ফিনল্যান্ডের মতো হোক। প্রতি ক্লাসরুম ১৮ জন স্টুডেন্টের বেশি হবে না। ছাত্র,শিক্ষক অনুপাত ১: ১২ ফিনল্যান্ডের মতো করা হোক। জিডিপি র ২০% শিক্ষায় ব্যয় করা হোক। কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করা হোক। সব পর্যায়ের শিক্ষার লিডারশিপ দেয়া হোক,সৎ ও যোগ্য শিক্ষাবিদ বা শিক্ষকদের। আগে মাঠ প্রস্তুত করতে হবে,তারপর বীজ রোপণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, জোরপূর্বক চাপিয়ে দেয়া কোনকিছুই সুফল বয়ে আনে না। তাই এই নতুন কারিকুলাম অবিলম্বে বাতিল করে পূর্বের কারিকুলামে ফেরার জোর দাবি জানাচ্ছি।
লেখক:
শিক্ষক ও সাংবাদিক।
সম্পাদক ও প্রকাশক – মোঃ মাহবুবুল আলম
Copyright © 2025 Daily Aromoni Protidin. All rights reserved.