বিএনপি-জামায়াত আন্দোলনের নামে নাশকতা করছে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষের জীবন কেড়ে নেবে, মানুষকে ভোট দিতে দেবে না, নির্বাচন বন্ধ করবে এতো সাহস কোথা থেকে পায়? ওই লন্ডনে বসে একটা কুলাঙ্গার হুকুম দেয় আর কতোগুলো লোক এখানে আগুন নিয়ে খেলে। আগুন নিয়ে খেলতে এলে তাদের হাত পুড়িয়ে দেয়া হবে। কয়েকটি গাড়ি পোড়ালেই সরকার পড়ে যাবে, অত সহজ না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আগুন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
২০ ডিসেম্বর, বুধবার সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
আল্লাহ যখন কাউকে কিছু দেয় তা বুঝেই দেয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমেরিকার প্রস্তাব আনুযায়ী আমরা গ্যাস বিক্রি করতে রাজি হইনি বলে ২০০১ সালে আমাদের ক্ষমতায় আসতে দেয়া হয়নি। বিএনপি এ প্রস্তাবে রাজি হওয়ায় তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়া হয়। এই বিএনপি এখন অগ্নিসন্ত্রাস করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের দুর্নীতি এফবিআই ধরেছে এবং সাক্ষী দিয়েছে। সেই সাক্ষীতেই তারেক জিয়ার সাজা হয়েছে। ২০০৭ সালে তারেক রাজনীতি করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে দেশের বাইরে চলে যায়। সেখানে বসে এখন হুকুম দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০১৩ সালে বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত তাদের এই সন্ত্রাস চলে। অসংখ্য মানুষ এতে হতাহত হয়। ওই অগ্নিসন্ত্রাস করে তারা নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি। এবারও পারবে না।
বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপির চেয়ারম্যান কে? দুর্নীতির মামলার আসামি। এতিমের টাকা আত্মসাতকারী। আরেকজন লন্ডনে বসে অগ্নিসন্ত্রাসের নির্দেশ দিচ্ছে। এরা কি মানুষ? এদের কাছে মানবিকতা বলতে কিছু নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলো। একজন লন্ডনে বসে মনোনয়নপত্র বিক্রি করেছে। আরেকজন বিক্রি করেছে গুলশানে বসে। এছাড়া, পল্টন থেকেও আরেকবার বিক্রি করেছে। এভাবে নমিনেশনকে বাণিজ্যে পরিণত করে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে তারা।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের আমলে দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, আমরা চাই দেশের একজন মানুষও যেনে ভূমিহীন না থাকে। আমরা শিক্ষার মানোন্নয়ন করেছি। আমাদের আমলে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে।
আবারও নৌকায় ভোট দিয়ে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নৌকায় ভোট দিলে দেশের উন্নয়ন হয়। আওয়ামী লীগ একটানা ক্ষমতায় আছে বলেই দেশের এত উন্নয়ন হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা যখন দেশের দায়িত্ব নেন তখন এক টাকাও রিজার্ভ ছিল না। একটি ভঙ্গুর দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতিকে তিনি মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকরা আমার বাবা, মা ও ভাইদের নৃশংসভাবে হত্যা করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষ নৌকা মার্কায় বারবার ভোট দেয় বলেই আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি। আমরা আজকে দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করতে পেরেছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল বলেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করে। অতীতের সরকারগুলো ক্ষমতায় এসেছিল ভোগ করতে।
মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে এসেছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে। দেশের মানুষের খাদ্যের আর সংকট হবে না।
সিলেটের বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে সিলেটবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি। বলেন, সিলেটবাসী সেই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে শুরু করে সবসময়ই আমাদের সঙ্গে রয়েছে।
উপস্থিত জনতাকে নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই নৌকা নুহ নবীর নৌকা। এই নৌকার মাধ্যমে মানব জাতিকে রক্ষা করেছেন রাব্বুল আলামিন। এই নৌকা স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। নৌকা ক্ষমতায় এসেছে বলেই দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নতি হয়েছে।
এর আগে বেলা ১১টা ৩৩ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-৬০১ এর একটি ফ্লাইটে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন শেখ হাসিনা। বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে অভ্যর্থনা জানান কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। সিলেটে পৌঁছার পরে হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার জিয়ারত করার পর শাহপরাণ (রহ.) মাজার জিয়ারত শেষে সিলেট সার্কিট হাউসে মধ্যাহ্নভোজ ও বিশ্রাম নেন। এরপর জনসভা মঞ্চে যান।
দৈনিক এরোমনি প্রতিদিন ডটকম তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন অনলাইন নিউজ পোর্টাল