ঢাকামঙ্গলবার , ১৮ জুলাই ২০২৩
  1. ই পেপার
  2. ক্যাম্পাস
  3. খেলা
  4. চাকরি
  5. জাতীয়
  6. জীবনযাপন
  7. ধর্ম
  8. পাঠক কলাম
  9. পাবনা জেলা
  10. বাণিজ্য
  11. বাংলাদেশ
  12. বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
  13. বিনোদন
  14. বিশেষ সংবাদ
  15. বিশ্ব

সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্পের সড়ক বাতি যাচ্ছে চোরের পেটে

বার্তা কক্ষ
জুলাই ১৮, ২০২৩ ৯:০২ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ফারুক হোসেন টুটুল (ঈশ্বরদী প্রতিনিধি) : ঈশ্বরদীতে প্রায় ১১ কোটি টাকার সৌর বৈদ্যুতিক “সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্পের” ১৯৩৮ টি সড়ক বাতির মধ্যে ১৬৬৪ টি বাতির মেয়াদ মেরামত করার কোম্পানির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২১ সালে। আর ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বরাদ্দকৃত ২৭৪ টি সড়ক বাতির মেয়াদও চলতি বছরের জুনে শেষ হয়েছে। এই ২৭৪ টি সড়ক বাতির মধ্যে আনুমানিক ৬০-৬৫ টি বাতি জ্বলছে। দীর্ঘদিন ধরে সড়ক বাতিগুলো নষ্ট হয়ে পড়ে থাকলেও সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের নির্দেশনা কিংবা বাজেট না থাকায় প্রায় সড়ক বাতিগুলো প্রায় পরিত্যাক্ত অবস্থায় রয়েছে। এই কারণে বিভিন্ন এলাকায় নষ্ট হওয়া সড়ক বাতিগুলোর সোলার প্যানেল, সোলার হোম ও খুঁটি চুরি হয়ে যাওয়ার খবর বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে। তবে ঠিক কতটি সোলার প্যানেল, সোলার হোম ও খুঁটি চুরি হয়েছে তার কোন হিসেবে জানা নেই। আর উপজেলায় প্রতিটি সড়ক বাতি স্থাপনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) তিন হাজার টাকা, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে (পিআইও) দুই হাজার টাকা এবং স্ব স্ব ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে দিতে হয়েছে এক হাজার টাকা করে। বুধবার বিকেলে ঈশ্বরদী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোঃ তহিদুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে সড়ক বাতি স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন এই কর্মকর্তা। তবে গত এক সপ্তাহ ধরে উপজেলার লক্ষ্মীকুন্ডা, সাহাপুর, পাকশী, সলিমপুর, দাশুড়িয়া, মুলাডুলি ও সাঁড়া ইউনিয়ন ঘুরে অন্তত অর্ধ শতাধিক স্থানের সোলার প্যানেল, সোলার হোমসহ লোহার খুঁটি স্থাপনকৃত জায়গা থেকে অদৃশ্য হওয়ার আলামত পাওয়া গেছে। সোলার প্যানেল খোলা দেখা গেছে অন্তত ৮০টি। শতাধিক জায়গায় খোলা রয়েছে সোলার হোম বাতি। তবে সড়ক বাতি চুরির সংখ্যা উপজেলার সাঁড়া, সলিমপুর, পাকশী ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে।
ঈশ্বরদী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, এ প্রকল্পের অধিনে এই উপজেলায় ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৫৬৯ টি, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৪৬৮ টি, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৪৯৯ টি ও ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ২৭৪ টি সড়ক বাতি স্থাপন করা হয়। উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নে মোট ১৯৩৮ টি সড়ক বাতি স্থাপন করা হয়েছিল। এর মধ্যে সোলার হোম সিস্টেমের ৬৭৭ টি, এসি সিস্টেমের ২৪ টি ও স্ট্রিট লাইট ১২৩৭টি। যার প্রতিটিতে ব্যয় হয়েছে ৫৬ হাজার টাকা। এই হিসেবে মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় ১১ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রকল্পের একাধিক সুত্রে জানা যায়, এই প্রকল্পের অধিনে সারা দেশের ন্যায় ঈশ্বরদী উপজেলাতেও সড়ক বাতিগুলোর বেহাল দশা সৃষ্টি হয়েছে। সরকারীভাবে সড়ক বাতিগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের কোন বরাদ্দ নেই। এমন কি স্থানীয়ভাবে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণেরও নির্দেশনা রাখা হয়নি। তবে এ প্রকল্পের নির্দেশ মোতাবেক ঈশ্বরদীর মোট বরাদ্দকৃত মূল্যের ১০ শতাংশ অর্থ জামানত হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) যৌথ স্বাক্ষরে সংরক্ষিত রাখা হয়। বিনামূল্যে স্থাপিত সড়ক বাতিগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত প্রদান করার কথা ছিল। সেই জামানতের টাকা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগ সাজছে ভাগাভাগির মাধ্যমে করা হয়েছে আত্মসাত। বরাদ্দের অর্থ বছর হিসেবে উপজেলায় প্রকল্পের প্রায় ৯০-১০০ ভাগ সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্পের সড়ক বাতিগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। আলোর পরিবর্তে নেমে এসেছে অন্ধকার। আর সেই ১১ কোটি টাকার সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্পের বাতি ও খুঁটি এখন যাচ্ছে চোরের পেটে। ভাংড়ি হিসেবে চোরেরা ভাংরীর দোকানে কেজি দরে বিক্রয় করছে সেসব বাতির খুঁটি। সুত্র মতে, প্রকল্পের শুরুতেই একটি সিন্ডিকেট এ বরাদ্দের অধিকাংশ অর্থই হাতিয়ে নিয়েছেন। এই কারণে নিম্নমানের ও নামসর্বস্ব সৌর বৈদ্যুতিক সোলার প্যানেল, সোলার হোম দেওয়ায় স্বল্প নির্ধারিত সময়ের আগেই সড়ক বাতিগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। দেশের স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান ইডকলের পরামর্শে বেসরকারি এনজিও টিএমএসএস এইসব সড়ক বাতি স্থাপন করে। বাতিগুলোর মেয়াদ তিন বছর ছিলো। মেয়াদ শেষ হওয়ায় কোম্পানি থেকে নষ্ট বাতিগুলো আর মেরামত করা হচ্ছে না। প্রকল্পটি ছিল এক কালিন সময়ের জন্য। ফলে সড়ক বাতি নষ্ট হলে মেরামত কিংবা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাখা হয়নি অর্থ বরাদ্দ কিংবা নির্দেশনা। ঈশ্বরদী উপজেলার পৌরসভা ও বিভিন্ন ইউনিয়নে গত এক সপ্তাহধরে ঘুরে ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বারও জনসাধারণের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলায় বরাদ্দকৃত ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৫৬৯ টি, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৪৬৮ টি, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৪৯৯ টি মোট ১৫৩৬ টি সড়ক বাতি পুরো নষ্ট হয়ে গেছে। আর ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ২৭৪ টি সড়ক বাতির মধ্যে ৭০ শতাংশ জ্বলে না। আর যেগুলো জ্বলে সেগুলোর আলো টিমটিমে।সুত্রগুলো মতে, অন্ধকার এলাকার সড়ক, হাট-বাজার, মসজিদ, মাদ্রাসা, গোরস্তান, ঈদগাহ, মন্দির, শ্মশানঘাট, সরকারী কার্যালয় ও ক্লাবগুলোতে এসব সৌর বৈদ্যুতিক বাতিগুলো লোহার পাইপের খুটিতে সংযুক্ত করে স্থাপন করা হয়। সারাদিন সুর্য্যের আলো থেকে চার্জ সোলার হোমে জমা করে সন্ধ্যার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে সৌর বৈদ্যুতিক বাতিগুলো জ্বলে। এই বাতিগুলোর আলোর কারণে অন্ধকার এলাকাসহ সড়কে স্বাচ্ছন্দে কিছুদিন চলাফেরা করা গেছে। কিন্তু খুটিসহ বাতিগুলো স্থাপনের কয়েক মাস পর থেকেই বাতিগুলো আর জ্বলে না। দীর্ঘদিন এভাবে পড়ে থাকায় কোথাও থেকে খুটিগুলো চোরেরা উপড়ে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। আবার কোথাও থেকে সৌলার হোমসহ বাতি খুলে নেওয়া হয়েছে। এখন শুধু খুঁটি দাঁড়িয়ে আছে। কোথাও খুটিগুলোও উপড়ে তুলে নিয়ে ভাংরীর দোকানে বিক্রয় করা হচ্ছে।
আবার এই সুযোগে উপজেলার পাকশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিন্টু দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) এবং গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) প্রকল্পের সোলার হোম সিস্টেম প্রকল্পের সড়ক বাতিগুলোর খুঁটির রং পরিবর্তন করে এলজিএসপি-৩ (লোকাল গর্ভন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট-৩) প্রকল্প দেখিয়ে বরাদ্দ দেওয়া ৮ লাখ ৬হাজার ৩০৮ টাকা ইতোমধ্যে আত্মসাতও করেছেন।

দৈনিক এরোমনি প্রতিদিন ডটকম তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন অনলাইন নিউজ পোর্টাল