ঢাকামঙ্গলবার , ৮ অক্টোবর ২০২৪
  1. ই পেপার
  2. ক্যাম্পাস
  3. খেলা
  4. চাকরি
  5. জাতীয়
  6. জীবনযাপন
  7. ধর্ম
  8. পাঠক কলাম
  9. পাবনা জেলা
  10. বাণিজ্য
  11. বাংলাদেশ
  12. বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
  13. বিনোদন
  14. বিশেষ সংবাদ
  15. বিশ্ব

অবহেলায় অযত্নে হারিয়ে যেতে বসেছে আত্রাইয়ের ঐতিহাসিক  নিদশন

বার্তা কক্ষ
অক্টোবর ৮, ২০২৪ ৭:২৬ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

কামাল উদ্দিন টগর, নওগাঁ  প্রতিনিধি :  নওগাঁর আত্রাইয়ের ভবানীপুর জমিদার বাড়ির স্মৃতিচিহ্ন আজ বিলুপ্তির পথে। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে জমিদার বাড়ির ধ্বংসাবশেষ। সৃষ্টি আর ধ্বংসের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলছে পৃথিবী। কেউ সৃষ্টিতে আবার কেউ ধ্বসের খেলায় মত্ত। আবার কারও দায়িত্বহীনতায় কালের গহব্বরে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহাসিক নির্দশন। বর্তমান যেমন গুরুত্ববহ সোনালী অতীতও তেমনি অনুপ্রেরণা  যোগায়। বাংলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে রয়েছে ইতিহাসের সাক্ষী মূল্যবান নির্দশন। এসব ছড়িয়ে থাকা ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত স্থান আমাদের সত্তায় আলোড়ন সৃষ্টি করে। এরকম ঐতিহাসিক দশর্নীয় স্থান নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার ভবানীপুর গ্রামে ছোট যমুনা নদীর তীরবর্তী মনোরম পরিবেশে এই জমিদার বাড়িটি। স্থানীয় লোকজনের কাছে “ ভবানীপুর রাজবাড়ি” বলেই পরিচিত। এ জমিদার বাড়ি নওগাঁ শহর থেকে মাত্র ২৪ কিঃমিঃ দক্ষিণে আত্রাই উপজেলার ১নং সাহাগোলা ইউনিয়নের ভবানীপুর বাজার সংলগ্ন স্থানে অবস্থিত। অযত্নে ও অবহেলায় এ জমিদার বাড়িটি আজ বিলুপ্ত হতে চলেছে। তথা অনুসন্ধানে জানা যায় জমিদার গির্জাশঙ্কর চৌধুরীর মৃত্যুর পর তার পুত্র প্রিয়শঙ্কর চৌধুরী জমিদারির দায়িত্ব গ্রহন করে জমিদারি পরিচালনা করতে থাকেন। জমিদার প্রিয়শঙ্কর চৌধুরীর স্ত্রীর নাম ছিল লাবণ্য প্রভা চৌধুরানী। তাদের ছিল ৬পুত্র ও ৬ কন্যা। জমিদার প্রিয়শঙ্কর চৌধুরীর আমলে জমিদারির ব্যাপক বিস্তার ঘটে। তিনি ভবানীপুর জমিদার বাড়ির সৌন্দয্য  বৃদ্ধি,নাট্যশালা নির্মাণ ও প্রজা সাধারণের সুপেয় পানীয় জলের কষ্ট দূর করার জন্য প্রাসাদের পার্শ্ববতী এলাকায় অনেক পুকুর খনন করেন।১৯১০ সালে জমিদার পরিবারের উদ্যোগে একটি স্কুল স্থাপন করেন। পরবর্তীতে স্কুলটির নাম জমিদার প্রিয়শঙ্কর চৌধুরীর বাবা গির্জাশঙ্কর চৌধুরী ভবানীপুর জিএস উচ্চ বিদ্যালয় নামকরণ করা হয়। ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর ১৯৬৮ সালের দিকে জমিদার প্রিয়শঙ্কর চৌধুরী সপরিবারে কলকাতা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে জমিদারের চতুর্থ পুত্র প্রতাপশঙ্কর চৌধুরী কলকাতা যাওয়ার ব্যাপারে দ্বিমত পোষন করেন। পরে জমিদার প্রিয়শঙ্কর চৌধুরী পুত্রকে রেখেই কলকাতা পাড়ি জমান। পরবর্তীতে প্রতাপশঙ্কর চৌধুরী তার স্ত্রী ও এক ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে হাতিয়াপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে ২০০৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী মৃত্যু বরণ করেন।বর্তমানে তার পুত্র অভিজিৎ চৌধুরীএই জমিদার বাড়ির এক জরাজীণ ভবনে বসবাস করছেন। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে জমিদারের সুবিশাল অট্রালিকা। জমিদার আমলে এ রাজবাড়ির মূল ফটকে ছিল দুইজন নেপালী প্রহরীর ছবি। আজও প্রাসাদগুলোর দেয়াল দেখে বোঝা যায়। রোমন কায়দায় স্তস্তগুলো জমিদারদের উন্নত রুচির পরিচয় বহন করে। জমিদার বাড়িতে সব মিলে কয়েকটি আঙ্গিনা এবং অসংখ্য ঘরছিল।প্রাসাদে ছিল জমিদার বাড়ির  তিনটি  নিজস্ব মন্দির দূর্গা মন্দির,গোপীনাথ মন্দির,বাসন্তি মন্দির, যেখানে পুরো বছরের জন্য একজন স্থায়ী পুরোহিত নিয়োজিত ছিলেন।সন্ধ্যায় প্রদীপ জ্বালানো হতো প্রতি সন্ধ্যায়। শোনা যেত শঙ্খধ্বনি যা কালের বিবর্তনে আজ জনমানবহীন স্থানে পরিনত হয়েছে। জমিদার বাড়িটিতে এখন শান বাঁধানো বড় একটি  কুয়ার অস্তিত্ব রয়েছে। জমিদার বাড়ির সামনে শান বাঁধানো বড়একটি পুকুর যার পাশে ছিল এলাকার প্রচলিত “গান বাড়ি” নামক ভবন যেখানে গান বাজনাসহ বিভিন্ন মনোরঞ্জনের কাজচলতো।গান বাড়ির নিকটে ছিল একটি কৈঠকখানা সামনে ছিল বড় ফুলের বাগান।সেখানে আজ নির্মিত হয়েছে প্রতাশমঙ্কর চৌধুরীর নাম করণে ভবানীপুর পিএস ল্যাবরেটরি   কিন্ডারগাটেন এন্ড হাই স্কুল। এদিকে দিনে দিনে জমিদার বাড়ির মূল্যবান সম্পদ চুরি ও লুট হয়ে যাচ্ছে বলে জানা যায়। প্রাসাদের মূল্যবান দরজা,জানালা,শালকাঠের তীর লুট করে নিয়ে যাওয়ার পর এখন দালানের ইট  খুলে নিয়ে এলাকার অনেকেরই বাড়ি তৈরি হবার কথাও প্রচলিত রয়েছে। অবহেলা অযত্নে ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা জমিদার বাড়িতে এখন সকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা থেকে  লোক জন দেখতে আসে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অট্রালিকা। যেন কেউ দেখার নেই।কারও মাথা ব্যাথা নেই যার ফলে বর্তমানে ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে ভবানীপুর জমিদারবাড়ি। বাড়িটিতে সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি কখনও। দিন দিন বাড়িটির সৌন্দর্য্য হারাতে বসেছে। এ ঐতিহাসিক স্থাপনাটির সংস্কার করা হলে এই জমিদার বাড়িকে ঘিরে গড়ে উঠতে পারে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। জমিদার বাড়িটি শীঘ্রই সংস্কার প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট এই ঐতিহাসিক নিদর্শন বাংলার গৌরব ইতিহাসের সাক্ষীঐতিহাসিক ভবানীপুর জমিদার বাড়ি সংস্কারে এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করছেন উপজেলার সচেতন মহল।

দৈনিক এরোমনি প্রতিদিন ডটকম তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন অনলাইন নিউজ পোর্টাল