ঢাকারবিবার , ২৫ ডিসেম্বর ২০২২
  1. ই পেপার
  2. ক্যাম্পাস
  3. খেলা
  4. চাকরি
  5. জাতীয়
  6. জীবনযাপন
  7. ধর্ম
  8. পাঠক কলাম
  9. পাবনা জেলা
  10. বাণিজ্য
  11. বাংলাদেশ
  12. বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
  13. বিনোদন
  14. বিশেষ সংবাদ
  15. বিশ্ব

প্রণোদনার সার-বীজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রকৃত কৃষক

বার্তা কক্ষ
ডিসেম্বর ২৫, ২০২২ ৪:৩৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বিশেষ প্রতিবেদন :  পাবনার ঈশ্বরদীতে সরকারি বরাদ্দের বিনা মূল্যের সার ও বীজ প্রকৃত কৃষকরা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি কৃষি প্রণোদনা বিতরণ কার্যক্রম শুরু হলে সুবিধাভোগী কৃষকরা এ অভিযোগ করেন। তাদের দাবি উপজেলার বেশির ভাগ ইউনিয়নেই প্রকৃত কৃষকরা প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। উপজেলার কৃষকরা জানান, জমি নেই এমন চাষিরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাদের নাম তালিকাভুক্ত করে নেন। এরপর বিনা মূল্যে সার-বীজ উত্তোলন করে কম টাকায় সারের দোকানে বিক্রি করে দেন। পরে ডিলারদের কাছ থেকে চড়া দামে তাদের সেগুলো কিনতে হয়।

কিছুদিন আগে আনুষ্ঠানিক কৃষি প্রণোদনা বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকরা এখন পর্যন্ত সরিষা মসুর, ভুট্টা , গম, ধান, খেসারী, সূর্যমুখী বীজ ও সার পেয়েছে বলে জানানো হয়। তালিকাভুক্ত কৃষকদের মধ্যে ধাপে ধাপে অন্যান্য বীজগুলো বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মিতা রানী সরকার।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, উপজেলায় প্রণোদনা দিতে প্রায় ১০ হাজার সুবিধাভোগী কৃষকের তালিকা তৈরি করেছেন কৃষি ইউনিয়ন কমিটি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী প্রণোদনার সার-বীজ বিতরণে প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকের তালিকা প্রস্তুত করার কথা কিন্তু দায়িত্বরত প্রতিনিধিরা সরেজমিনে কৃষকদের সঙ্গে কথা না বলে কিংবা মাঠ পর্যায়ে না গিয়ে জনপ্রতিনিধি বা অন্যদের ওপর নির্ভর করছেন। এতে যাচাই-বাছাই ছাড়াই জমিহীন এমনকি কোনো দিন কৃষিকাজ করেনি এমন কৃষকের নামও তালিকায় স্থান পেয়েছে। ফলে প্রকৃত কৃষকরা বঞ্চিত হওয়ায় তাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা গেছে।

দাশুড়িয়া ইউনিয়নের নওদাপাড়া গ্রামের কৃষক আলী বলেন, আমি আবাদের উপরই নির্ভরশীল, আমিতো স্লীপের সার-বীজ কোন দিন ও পাইনি। আমি কৃষির মাধ্যমেই পরিবারের চাহিদা মেটায়। আমিতো আনেক আগে থেকেই আবাদ করি এখন পর্যন্ত কোন প্রণোদনা পাইনি । এবার আমি ওল কপি ০৪ বিঘা, গাজর ০৪ বিঘা ও পেঁয়াজ প্রায় বিঘা খানেক চাষ করেছিলাম। কৃষি অফিস বা ইউনিয়ন থেকে আমি কিছুই পায়নি। ওরা কারে দেয় তা জানি, আমি মনে হয় কৃষক না । ওরা যে বড় বড় কৃষক কই পায় ওরাই জানে, আমি একবারো কিছু পায়নি। যাদের আবাদ নেই তারা পায়, ওগুলা তারা বিক্রি করে দেয়।

কৃষক মাসুদ বলেন, আমি সারা বছর কৃষি কাজ ও কৃষি ফসলের উপর নির্ভরশীল, আবাদ করেছি। কিন্তু আমাকে কৃষি কার্ড দেয়া হয়নি। বিনা মূল্যে পাওয়া তো দূরের কথা, ডিলারদের কাছ থেকে চড়া মূল্যে সার ও বীজ কিনে চাষাবাদ করি। তেমন কোন বীজই পায়নি শুধু সার পেয়েছি ১ খুতি কয়েকদিন আগে অনেক ঘুরাঘুরি করে।

সলিমপুর ইউনিয়নের দুলাল প্রামানিক বলেন, আমিতো গ্রীষ্মকালীন ফল থেকে শুরু করে শাক সবজিসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করি আমি কোন দিন সরকারী সার বীজ পায়নি। এবার আমার তিন বিঘা গাজর ও ৫ বিঘা ভুট্টা আবাদ করেছি, কোন কৃষি আফিসার ও দেখতে আসেনা। নিজে যা বুঝি তাই করি। তবে সরকারী সার বাজারের সারের দোকান থেকে কয়েকজন কিনে আনছে ।

লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের আখতার বলেন, কৃষি প্রণোদনা খোঁজ খবরই জানিনা, এগুলা কখন দেয়া হয় । আমি এবারো ৭ বিঘা পেঁয়াজ আবাদ করেছি সাথে অন্যান্য ফসলতো আছেই। আমি সরকার বা কৃষি অফিসারদের থেকে কোন কিছুই পায়নি, আমার সাথে কোন কৃষি অফিসারের যোগাযোগও হয়নি।

কৃষক বকুল ইসলাম বলেন, প্রণোদনার তালিকা তৈরী করে এলাকার মেম্বার বা সরকারী দলের দায়িত্বরত ব্যক্তিরা উনারা যাদের নাম তালিকায় দেন তারা পায়। কথার এক পর্যায়ে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় আপনি কেন পান নাই , জবাবে তিনি বলেন, এলাকার মেম্বার বা জনপ্রতিনিধি আমাকে কিছুই দেয়নি। আমি না কী কৃষকের আওতায় পড়িনি, আর এসব লিষ্ট করতে কৃষি অফিসাররা আসেনা ।

পাকশী ইউনিয়নের কৃষক জুনাব আলী বলেন, আমি এলাকার বড় কৃষক আমি শুধু এক ব্যাগ গম পাইছি, তাছাড়া কোন কিছুই আমাক দেয়নি। যারা প্রকৃত কৃষকই না তারাই প্রণোদনার সুবিধা পাচ্ছে, আর বঞ্চিত হচ্ছে প্রকৃত কৃষকরা। যারা প্রকৃত কৃষক না তারা প্রণোদনা সার বীজ পেয়ে বিক্রি করে দিয়েছে এমন অনেকেই আছে। আর কৃষি অফিসাররা তো দেখা করেনা আমরাই কষ্ট করে যোগাযোগ করি ।

উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের স্থানীয় কৃষকরা জানান, আমরাতো বিঘা বিঘা জমি চাষাবাদ করি কিন্তু কৃষি কার্ড পায়নি। কখন দেয়া হয়েছে তাও জানিনা বা কেউ জানায়নি। তাদের অভিযোগ, ইউনিয়নের বেশির ভাগ প্রকৃত কৃষকদের এ সরকারি সুবিধার আওতায় আনা হয়নি। খোঁজখবর না নিয়েই যাদের জমি খুব কম, কিংবা নেই, জমি থাকলেও চাষ করেন না এমন ব্যক্তির নাম তালিকায় আছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা রানী সরকারের থেকে প্রণোদনার তালিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তালিকা তৈরীর নিয়ম উপজেলায় যেইটা আসে তা ভাংতি করে ইউনিয়ন পর্যায়ে দেয়া হয় । কৃষকদের তালিকা ইউনিয়ন কৃষি কমিটি নামের কমিটি আছে তারাই ইউনিয়নের তালিকা তৈরী করেন যা আমাদের কাছে আসে। তালিকা অনুযায়ী আমরা তাদের মাঝে সার-বীজ বিতরণ করব।

দৈনিক এরোমনি প্রতিদিন ডটকম তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন অনলাইন নিউজ পোর্টাল