“ওসমানী উদ্যানের পুকুর রক্ষা করা হোক” নকশা বহির্ভূত বর্ধিত দোকান মার্কেট স্থাপনা উচ্ছেদ করে রাস্তা প্রশস্ত করে গাড়ি ও জনসাধারণের চলাচলের পথ সুগম করা হোক”
ওসমানী উদ্যানের পুকুর ভরা পানি থাকলে, আর রাস্তাগুলো আরো প্রশস্ত থাকলে, আগুন আরো কম সময়ের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হতো। খবরে প্রকাশ ওসমানী উদ্যান সংস্কারের নামে বহু বছর ধরেই কাজ চলছে। পুকুরের পানি তলানীতে। বঙ্গবাজারের খুব সন্নিকটেই ওসমানী উদ্যান। অথচ পর্যাপ্ত পানি ছিলো না!! পার্কের পুকুর সচারাচর কৃত্রিমভাবে পানি দিয়ে সবসময় টুইটুম্বুর রাখা হয়। ওসমানী উদ্যানের পুকুরে নাকি তেমন পানিই ছিলো না। উল্টো সংস্কারের নামে পুকুরের মূল আয়তন আরো ছোট করা হয়েছে বলে টিভিতে একজন দর্শনার্থী বক্তব্যে বললেন!! সত্যিই যদি তেমনটা হয়ে থাকে, তবে তা বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিজেই খতিয়ে দেখবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।
বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। ইতিপূর্বে আরো একাধিকবার বঙ্গবাজার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে! তদন্ত কমিটি হয়েছে, কি তদন্ত হয়েছে? অগ্নিকান্ড পরবর্তী সিটি কর্পোরেশন, দোকান মালিক সমিতি, ও সংশ্লিষ্ট সংস্থা, ব্যক্তিবর্গরা কি ব্যবস্থা নিয়েছেন? তা কতোটা কার্যকর বা পরিকল্পিত ছিলো তা কারোই জানা নেই। এবারের অগ্নিকাণ্ড পরবর্তী বরাবরের মতোই তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। আমি বলবো সর্বশেষ বিগত,কয়েক বছর আগে ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ড পরবর্তী সময়ে যদি পরিকল্পিত ব্যবস্থা নেয়া হতো তাহলে আজকের স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি নাও ঘটতে পারতো। আর কোনে কারণে আগুন লাগলেও তা এতো ভয়াবহ সর্বগ্রাসী রূপ নিতো না। এতো ক্ষয়ক্ষতিও হতো না।
আরেকটি বিষয় লক্ষনীয় তা হলো রাজধানী ঢাকায় এ যাবৎকাল বহু পুরনো মার্কেট স্থাপনা ভেঙে অত্যাধুনিক মার্কেট শপিংমল গড়ে উঠেছে। এখনো অগণিত নতুন নতুন অত্যাধুনিক মার্কেট নির্মাণাধীন। অথচ একাধিকবার এই বঙ্গবাজার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও সেখানে বহুতল বিল্ডিং মার্কেট স্থাপনা নির্মাণ করা হয়নি!! টিনকাঠের দোতলা মার্কেটটিতে প্রায় আড়াই তিনহাজার ঘিঞ্চি ঘনবসতিপূর্ণ দোকানপাট! অগণিত গলিপথ! স্বাভাবিকভাবেই যেখানে পাঁয়ে হেঁটে চলাচল মন্থরগতিতে করতে হয়।
ফায়ারসার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক মহোদয় বললেন এহেন অবস্থার বিবরণ দিয়ে, মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ সতর্ক করে তারা নাকি কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে বহুবার জানিয়েছেন। তাহলে কর্তৃপক্ষের সতর্ক না হওয়া ও উদাসীনতার কারণ কি!!??
মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ তা আমলে নিয়ে ইতিপূর্বের ঘটে যাওয়া সর্বশেষ অগ্নিকান্ডের পরেই যদি যথাযথ কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হতো? তথা টিনসেডের দ্বিতল মার্কেটেটি ভেঙে যদি বহুতল অত্যাধুনিক মার্কেট শপিংমল স্থাপনা করা হতো। যেখানে দ্রুত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাসহ সর্বাধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা থাকতো তা হলেতো আজকের এই ভয়াবহ দিনটি দেখতে হতো না? এতো মানুষ নিঃস্ব হতো না?
দেশের এতোবড় অপূরণীয় ক্ষতি হতো না?
রাষ্ট্রের মধ্যে বসবাসকারী সকল ধর্ম বর্ণের, সকল শ্রেণিপেশার মানুষের, একজন ভিক্ষুক থেকে শুরু করে দেশের সর্বোচ্চ ধনী ব্যক্তি পর্যন্ত সকলের সর্বপ্রকার নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব সরকারের বৈকি। আর তার ব্যতয় ঘটলে দায়ভারও সরাকারকেই নিতে হবে।
এক্ষণে কথা হলো দায়ভার সরকার নিলো, ক্ষতিগ্রস্তদেরকে ক্ষতিপূরণও সরকার দিলো? তাতেতো অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হয়ে যাওয়া হাজার হাজার কোটি টাকার পোষাক ফিরে আসবে না। পথে বসে যাওয়া পরিবারগুলোর বহুবছরের পরিশ্রমের দ্বারা গড়ে তোলা স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় রাতারাতি গড়ে তোলা তো আর সম্ভবপর হবে না।
অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হয়েছে লাখোলাখো পরিবারের স্বপ্নের তাজমহল। বহুবছরের শ্রম অর্থে সাধনায় গড়ে তোলা জীবন জীবিকার ভরসাস্থল, স্বপ্নকুঠির। যা শুকিয়ে যাওয়া সাতসমুদ্র অশ্রুজলে ভরে দিলেও আর ফিরে আসবে না। তবে এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে সতর্ক হয়ে আমরা যদি সকল স্থাপনাকে, আমাদের সকল নির্মাণকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলি। রাষ্ট্রের গোটা অবকাঠামোকে, রাষ্ট্র পরিচালনার সকল ব্যবস্থাপনাকে নিষ্ঠা, সততা, পরিশ্রম ও ত্যাগের মাধ্যমে মানবিক ও দেশপ্রেমের চেতনা মিশিয়ে বিনির্মাণ করি। ছোট বড় সকল সমস্যাকে বড় ছোট হিসেবে নয়, রাষ্ট্রের ও দেশের জনগণের সমস্যা হিসেবে সমানভাবে আন্তরিকতার সাথে সমাধানে এগিয়ে আসি, তবেই আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। দেশ সমৃদ্ধ হবে। দেশের মানুষ নিশ্চিন্ত জীবনযাপন করতে পারবে। তাই রাষ্ট্রকে রাষ্ট্র পরিচালনার ঢালগুলোকে সুচারু হতে হবে। হতে হবে পরিশ্রমী, সৎ, মানবিক, আন্তরিক।
দৈনিক এরোমনি প্রতিদিন ডটকম তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন অনলাইন নিউজ পোর্টাল