ফারুক হোসেন টুটুল :
ঝকঝকে রাস্তায় তেলতেলে দুর্নীতি। রাস্তা তো নয় যেনো উঁচু নিচু হলুদ ক্ষেতের সারি। ঈশ্বরদী থেকে সাঁড়া ইউনিয়নের আড়মবাড়িয়া পর্যন্ত দূরত্ব ৮ কিলোমিটার। ৫ কিলোমিটার রাস্তার কার্পেটিংয়ের কাজ হয়েছে। ঈশ্বরদী শহরের দিকে কাজ চলমান রয়েছে। এরমধ্যেই রাস্তাটির সাঁড়ার গোকুল নগর মোড় থেকে ঈশ্বরদীর শেষ সীমানা আড়মবাড়িয়া পর্যন্ত ৫কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে পকেট হয়ে ভেঙ্গে গেছে অন্তত দেড় শতাধিক স্থানে। আবার কাজে কারচুপি করায় অধিকাংশ জায়গাতেই রোলার করা রাস্তার পাথর বের হয়ে গেছে। যানবাহনের চাকার ঘর্ষণে তীব্রগতিতে ছিটকে যাচ্ছে পাথরের সেসব টুকরো। আবার ঈশ্বরদী শহরের আলহাজ্ব মোড় থেকে রেলগেট পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশের ড্রেনের কাজেও করা হয়েছে ভয়াবহ অনিয়ম ও দূর্নীতি। বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ড্রেনকে করা হয়েছে কোথা সরু, কোথা প্রশস্ত। আবার কোথাও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অবৈধভাবে সড়ক ও জনপথের জায়গায় নির্মাণ করা অবকাঠামো রক্ষা করে সোজাসোজিভাবে ড্রেন না করে আঁকাবাঁকা করে করা হয়েছে। সাপের আকার ধারণ করেছে। ফলে কমে গেছে রাস্তার প্রশস্ততা। এসব চিত্র চলমান রাজশাহীর বানেশ্বর-সারদা-চারঘাট-বাঘা-না টরের লালপুর ও পাবনার একাংশ ঈশ্বরদী (আর-৬০৬) আঞ্চলিক মহাসড়ক সম্প্রসারন কাজের। গত এক সপ্তাহ ধরে খোঁজ খবর নিয়ে ও সরেজমিন ঘুরিয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, পাবনার তত্ত্বাবধায়নে ৬০ কোটি ৩০ লাখ ৭৭ হাজার ৫৪০ দশমিক ৩৬৩ টাকা ব্যয়ের এই রাস্তাটির চলমান নির্মাণ কাজের এচিত্র দেখা গেছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, পাবনা নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সুত্রে জানান, ৫৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহীর “ বানেশ্বর-সারদা- চারঘাট-বাঘা-নাটরের লালপুর- ও পাবনার একাংশ ঈশ্বরদী (আর-৬০৬) আঞ্চলিক মহাসড়ক সম্প্রসারন কাজ চলমান রয়েছে। কাজটি “ ডন এন্টারপ্রাইজ এন্ড মুজাহার এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লিমিটেড নামের দুটি কোম্পাটি জুয়েন্ট ভেঞ্চারে করছে। এর মধ্যে মুজাহার এন্টারপ্রাইজ পাবনার ঈশ্বরদীর আলহাজ¦ মোড় থেকে সাঁড়া ইউনিয়নের আড়মবাড়িয়া ঈশ্বরদীর শেষ সীমানা পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার রাস্তার কাজ করছে। গত ১৯ নভেম্বর/২১ তারিখে পাবনার ঈশ্বরদীর অংশের কাজে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন কাজটি (পাবনা-৪) ঈশ্বরদী-আটঘড়িয়া আসনের সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মোঃ নুরুজ্জামান বিশ্বাস। সুত্র মতে, ঈশ্বরদী অংশের ৮ কিলোমিটার রাস্তার কাজের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০ কোটি ৩০ লাখ ৭৭ হাজার ৫৪০ দশমিক ৩৬৩ টাকা। কাজটি গত ১৫ এপ্রিল/২১ তারিখে শুরু করা হয়। আর শেষ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো গত ৪ মে/২২ তারিখে। এ কাজের মধ্যে রয়েছে তিনটি কালভার্ট নির্মাণ, ঈশ্বরদী পৌরসভার মধ্যে রাস্তার দুই পাশ দিয়ে গড় এক মিটার উচ্চতা ও প্রস্থ ড্রেনেজ নির্মাণ ও ১৪ শ ফুট রাস্তা ডিভাইডার নির্মাণ। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের চেয়ে এক বছর পার হলেও মোট কাজের মাত্র ৬০-৬৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঈশ্বরদী র সাঁড়া ইউনিয়নের গোকুলনগর থেকে আড়মবাড়িয়ার শেষ সীমানা পর্যন্ত চার কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে নতুনভাবে কার্পেটিং করা রাস্তাটির অন্তত দেড় শতাধিক জায়গায় ইটের এজিং ভেঙ্গে গর্ত হয়ে গেছে। অন্তত একশো জায়গায় কার্পেটিংভেঙ্গে ২-৩ ফুট পর্যন্ত পকেট (গর্ত) হয়ে গেছে। ভেঙ্গে সৃষ্টি হওয়া গর্তের পাশে ইট ও লাল নিশানা উড়িয়ে দিয়েছেন স্থানীয়রা। আড়মবাড়িয়া বঙ্গবন্ধু ক্লাব সংলগ্ন এলাকার অনার্স ৩য় বর্ষে পড়য়া শামসুজ্জোহাসহ শাকিল, মহিদুল, আলফাজ, শরিফুল, সেলিম ও রাজু আহমেদ বলেন, রাস্তাটি কয়েকদিন আগে করেছে। পাশের ঢাল না বেঁধে ইটের এজিং দিয়েছিলো। গাড়ি চাকার চাপ ও বৃষ্টির পানি দিয়ে অনেক জায়গায় নতুন করে কার্পেটিং করা রাস্তা ভেঙ্গে গেছে। ভেঙ্গে যাওয়া সেসব জায়গায় লাল নিশানা উড়ানোসহ ইট দিয়ে সংকেত দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নির্মান কাজের ঠিকাদারের লোকজনকে এলাকাবাসির পক্ষ থেকে অবগত করা হলেও তারা কোনরুপ কর্নপাত করছেন আড়বাড়িয়ার স্থানীয় বাসিন্দা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আব্দুস সাত্তার, জহুরুল ইসলাম, কোরবান আলী, জীবন রহমান বলেন, ঝকঝকে রাস্তা নির্মাণে তেলতেলেভাবে অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হয়েছে। রাস্তাটি কাজ শেষ হতে না হতেই পাথরের টুকরোগুলো উঠে গেছে। গাড়ির চাকার চাপে ছিটকে যাচ্ছে। রাস্তা চলার সময় মাঝেমধ্যেই পথচারীদের পায়ে ও গায়ে ছুটি এসে লাগছে সেসব পাথর টুকরো। তারা অভিযোগ করে আরও বলেন, কাদাযুক্ত মাটির উপর হালকা করে কার্পেটিং হয়েছে। রোলার করার পরও পাথরের টুকরোগুলো সমানভাবে বসেনি। এমনকি রাস্তায় থাকা ছোট ছোট গর্তগুলো ভরাট করে রাস্তাটি সমান করা হয়নি। এই কারণে রাস্তাটি হলুদ ক্ষেতের সারির মতো উঁচু নিচু রয়েছে। বৃষ্টির পানি জমে যাচ্ছে। প্রায় ৬১ কোটি টাকা ব্যয়ের এই রাস্তার চলমান নির্মাণ কাজ দেখার যেন কেউ নেই। ঈশ্বরদী পৌরসভার আলহাজ মোড় থেকে রেলগেট পর্যন্ত রাস্তার দুইপাশ দিয়ে তিন কিলোমিটার পানি নিষ্কাশনের জন্য নির্মাণ করার কথা রয়েছে। এক পাশে ড্রেন নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। কিন্তু সড়ক ও জনপথের নিজস্ব জায়গা থাকলেও বিভিন্ন অজুহাতে ড্রেনটি সোজা করা হয়নি। আঁকাবাঁকা করে নির্মাণ করা হয়েছে। পৌরসভার বাসিন্দা বেলাল হোসেন, মাসুদ রানা, পাভেল হোসেন ও সিরাজুল ইসলাম বলেন, রাস্তার নির্মাণে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতি করা তো হচ্ছেই আবার ড্রেন নির্মাণেও করা হয়েছে অনিয়ম। ড্রেনটি সোজা না করে আঁকাবাঁকা করা হয়েছে। বিভিন্ন ব্যক্তি, সরকারী, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা প্রতিষ্টান, বাউন্ডারি ওয়াল ও টয়লেট পর্যন্ত না ভেঙ্গে আঁকাবাঁকা করে ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। এতে রাস্তার প্রশস্ততা কমে গেছে। এটা সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতি ছাড়া আর কিছুই নয়। ঈশ্বরদী পৌরসভার মেয়র ইছাহক আলী মালিথা জানান, অন্যান্য কাজে সড়ক ও জনপথ পৌরসভার সহযোগিতা ও পরামর্শ নিয়েছে। কিন্তু রাস্তার ড্রেন করার ক্ষেত্রে পৌর সভা কিংবা আমাকে জানানো হয়নি। সড়ক ও জনপথ কেন ড্রেন আঁকাবাঁকা করে রাস্তাটির প্রশস্ততা কমিয়েছে এটা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। তবে বৃহত জনস্বার্থে পুরাতন টয়লেটটি ভেঙ্গে ড্রেনটি সোজা করে রাস্তাটা।
দৈনিক এরোমনি প্রতিদিন ডটকম তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন অনলাইন নিউজ পোর্টাল