জান্নাতুল শিফা (সম্পা)
যথাযথ মর্যাদা ও উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে প্রতিবছর ২১ নভেম্বর আমাদের দেশে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত হয়ে থাকে। প্রতিবছরের মতো এ বছরও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে। আজ সশস্ত্র বাহিনী বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক, জাতির এক আস্থার স্থান। দেশের যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় সশস্ত্র বাহিনীর অবদান মূল্যায়ন করলে এই দিবসটির গুরুত্ব উপলব্ধি করা সম্ভব। সশস্ত্র বাহিনী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অকুতোভয় বীর সেনানী মুক্তিকামী আপামর জনসাধারণের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশমাতৃকাকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে জল, স্থল ও আকাশপথে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে অপ্রতিরোধ্য আক্রমণ চালিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধারা ১৫ নভেম্বর থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধের গতি আরো বাড়িয়ে দেয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে যৌথ বাহিনী ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর তারিখে যশোরের বয়রা এলাকা থেকে তাদের অভিযান শুরু করে। এ অভিযানের অংশ হিসেবে মিত্রবাহিনী, মুক্তিবাহিনী এবং সেনাবাহিনী কপোতাক্ষ নদ অতিক্রম করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গরীবপুর-জাহাঙ্গীরপুর অক্ষ বরাবর প্রতিরক্ষা অবস্থান গ্রহণ করে। ব্রিগেড আর্টিলারিকে মোহাম্মদপুরে মোতায়েন রাখা হয় এবং ট্যাংক বহরকে ভদ্রা এলাকায় রাখা হয়। এ অঞ্চলে যৌথ বাহিনী পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে বিচ্ছিন্নকরণ, বাইপাস, আক্রমণ ও শত্রুর পশ্চাতে প্রতিবন্ধকতা তৈরির সমন্বয়ে রণকৌশল ব্যবহার করে। মিত্রবাহিনী, মুক্তিবাহিনী এবং সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে পরিচালিত এই যৌথ অভিযান যুদ্ধের ফলাফলকে ত্বরান্বিত করে, যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধকালীন চলমান অন্যান্য যুদ্ধের জন্য নতুন মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত। যুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে সামরিক বাহিনীর অবদানকে সাধারণ জনতার আত্মত্যাগের সঙ্গে একীভূত করে রাখা এবং ২১ নভেম্বরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সমুন্নত রাখতে ৮০-র দশকের মাঝামাঝি থেকে সম্মিলিতভাবে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর আগে ২৫ মার্চ সেনা, ১০ ডিসেম্বর নৌ এবং বিমানবাহিনী ২৮ সেপ্টেম্বর আলাদাভাবে দিবসসমূহ পালন করত। সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি সদস্যের কাছে এ দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যময়। বাংলার আপামর জনতা আর সশস্ত্র বাহিনীর বাঙালি সদস্যদের সম্মিলিত ও পরিকল্পিত আক্রমণে মুক্তিযুদ্ধে যোগ হয় এক নতুন মাত্রা। এভাবেই দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ আর ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বরে অর্জিত হয় আমাদের মহান স্বাধীনতা। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ০৩ জন বীরশ্রেষ্ঠসহ ১ হাজার ৫৩৩ জন সেনাসদস্য শাহাদত বরণ করেন এবং ২৯১ জন সেনাসদস্য খেতাবপ্রাপ্ত হন। ১৯৭১ সালে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী সম্মিলিত হয়েছিল জনতার সঙ্গে। সেই ঐতিহাসিক সম্পর্ক অর্থাৎ জনতা ও সশস্ত্র বাহিনীর পারস্পরিক সুসম্পর্ক আমাদের বর্তমান প্রজন্মের জন্য একটি পাথেয় হয়ে আছে। জাতির প্রয়োজনে অর্পণ করা কঠিন দায়িত্ব পালনে সশস্ত্র বাহিনীর নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা অনন্য। দেশের প্রতিরক্ষার জন্য প্রশিক্ষণ আর জনগণের জন্য ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে আমাদের সশস্ত্রবাহিনীর দেশপ্রেম। তরুণ প্রজন্মেও কাছে তাই এই দিনটির গুরুত্ব পরিসীম। দেশ প্রেমের আদর্শ ও দেশ গঠনের অঙ্গীকার নিয়ে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা তরুণ প্রজন্মের কাছে শস্ত্রবাহিনী আলোর দিশারি স্বরূপ। তাই দিবসটি উপলক্ষে দেশের সব সেনানিবাস, নৌ ঘাঁটি ও বিমান বাহিনী ঘাঁটির মসজিদগুলোতে দেশের কল্যাণ ও সমৃদ্ধি এবং সশস্ত্র বাহিনীর উন্নতি কামনা করে ফজরের নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন সামরিক বাহিনীর অবদানকে সাধারণ জনতার আত্মত্যাগের সঙ্গে একীভূত করে দেখা হয় এ দিবসটিতে। বিভিন্ন সংকটে-বিপদে সশস্ত্র বাহিনী এ দেশের মানুষের পাশে থেকেছে সব সময়। ঝড়-তুফান, বন্যা তো আছেই, এর ওপর বৈশি^ক পরিস্থিতির উত্তাপও এসে লাগে, আর তখন আমাদের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা সক্রিয় হয়ে ওঠেন। যেমন-মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করে ২০২০ সালে করোনাভাইরাসের মহামারিতেও সশস্ত্র বাহিনী বিভিন্ন সেবামূলক কাজে নিয়োজিত ছিল। বাংলাদেশের বিভিন্ন শহর এবং প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে নিজের কাঁধে বহন করে গরিব জনগোষ্ঠীর কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছেন সেনা সদস্যরা। জাতির প্রয়োজনে অর্পণ করা কঠিন দায়িত্ব পালনে সশস্ত্র বাহিনীর নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা অনন্য। সে ক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনী দিবস আলোকবর্তিকা হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে।
দৈনিক এরোমনি প্রতিদিন ডটকম তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন অনলাইন নিউজ পোর্টাল