ঢাকারবিবার , ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  1. ই পেপার
  2. ক্যাম্পাস
  3. খেলা
  4. চাকরি
  5. জাতীয়
  6. জীবনযাপন
  7. ধর্ম
  8. পাঠক কলাম
  9. পাবনা জেলা
  10. বাণিজ্য
  11. বাংলাদেশ
  12. বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
  13. বিনোদন
  14. বিশেষ সংবাদ
  15. বিশ্ব

এনজিওর কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হিসাবরক্ষকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ, গ্রেফতার ৫

বার্তা কক্ষ
সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪ ২:৫১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
টাঙ্গাইলের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সোশ্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট থ্রু ইউনিটি (সেতু) এর সহকারী হিসাবরক্ষকে পিটিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। তার নাম হাসান আলী প্রামানিক। সে সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার পুঠিয়া গ্রামের আব্দুল লতিফ প্রমানিকের ছেলে। শুক্রবার গভীর রাতে টাঙ্গাইল শহরে অবস্থিত সেতু’র প্রধান শাখা সেতু টাওয়ারের পশ্চিম পাশ থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। পরিবারের অভিযোগ সেতু কর্তৃপক্ষ তাকের পিটিয়ে হত্যা করে লাশ নিচে ফেলে দিয়ে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে চাচ্ছে। তবে সংস্থাটির কর্তৃপক্ষের দাবি ৭ তলা থেকে লাফ দিয়ে সে আত্মহত্যা করেছে।

 

২১ সেপ্টেম্বর, শনিবার সন্ধ্যায় নিহতের মা সুফিয়া বেগম বাদি হয়ে গ্রেফতারকৃত পাঁচজনসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

সেতু’র নির্বাহী পরিচালক মির্জা সাহাদত হোসেনের ছেলে উপপরিচালক (মানবসম্পদ) মির্জা সাকিব হোসেন, উপপরিচালক রফিকুল ইসলাম (সহকারী কর্মকর্তা আইন), শরিফুল ইসলাম, স্টাফ অফিসার রাশেদুল ইসলাম হৃদয় ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার খায়রুল হাসানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

জানা যায়, পাঁচ বছর আগে সেতু এনজিওতে মাঠকর্মী হিসেবে যোগদান করেন হাসান। ভালো কাজের জন্য দুই বছর আগে সহকারী হিসাবরক্ষক পদে পদোন্নতি পান। ওই পদে জামালপুর সদরের পিয়ারপুর শাখায় কর্মরত ছিলেন। সেতু কর্তৃপক্ষের অভিযোগ ওই শাখায় আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক, ব্যবস্থাপক ও সহকারী হিসাব রক্ষক তিনজন যোগসাজশে সংস্থাটির প্রায় ৪৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। এসব ঘটনায় ওই তিনজনকেই ক্লোজ করে সেতু’র প্রধান কার্যালয় টাঙ্গাইলে নিয়ে আসা হয়। গত ১৬ সেপ্টেম্বর তারা তিনজনই প্রধান অফিসে আসেন। কর্তৃপক্ষ তাদের অর্থ আত্মসাতের বিষয় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। হাসান টাকা আত্মসাতের বিষয়টি অস্বীকার করেন। শেষে আঞ্চলিক ব্যবস্থাপককে ছেড়ে দিলেও ব্যবস্থাপক ও হিসাব রক্ষককে ৭ম তলার একটি কক্ষে আটকে রাখেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর হাসানের মা-বাবাকে সেতু’র প্রধান শাখায় ডেকে আনা হয়। তার মা বাবার সামনেই হাসানকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। টাকা না দিলে তাকে দেখে নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন তারা। হাসানের মা-বাবা সাতদিনের সময় নিয়ে বাড়িতে চলে যায়। তখন থেকে দুজনকে সেতু টাওয়ারের ৭ম তলায় আটকে রাখা হয়।

 

হাসানের বাবা লতিফ প্রামানিক অভিযোগ করে বিবার্তাকে বলেন, আমার ছেলেকে তারা পিটিয়ে মেরে ফেলে আত্মহত্যা বলছে। ১৮ তারিখে ছেলের সাথে কথা বলে গেলাম। সে আমাকে বলেছে কোনো টাকা মারে নাই। আমি রিকশা চালাই। অভাবের সংসার। আমাকে শুক্রবার রাতে ফোন করে বলা হয় আপনার ছেলে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আছে। আপনি আসেন। রাতে এসে আমার ছেলের লাশ দেখি। হাসানের চার বছরের একটি মেয়ে রয়েছে, নাম হিয়া মনি। সে কেনো আত্মহত্যা করবে। আমি প্রশাসনের কাছে এঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই। হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

হাসানের ফুফু বাহাতন বেওয়া বিবার্তাকে বলেন, এক মাস আগে হাসান বাড়ি আসছিল। বলছিল ফুফু তোমাকে তো কিছুই দিতে পারি না। কারণ যে টাকা বেতন পাই- খাইতেই সব ফুরিয়ে যায়। বেশি বেতন পেলে তোমাকে কিছু কিনে দেব। আমার সেই হাসান কোন ভাবেই মরতে পারে না। তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত চাই।

হাসানের ছোট ভাই আবুল হাশেম বিবার্তাকে বলেন, আমার ভাই অত্যন্ত সততার সঙ্গে চাকুরি করতেন। আত্মসাৎ হয়ে থাকলে অফিসের অন্য কর্মকর্তারা করেছে। আমার ভাই বার বার অস্বীকার করেছে। তারপরও কর্তৃপক্ষ আমার ভাইয়ের কোন কথাই শোনেনি। সে আত্মহত্যা করতে পারে না, তাকে মেরে ফেলা হয়েছে।

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার পুর্নিমাগাতী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুর রউফ বিবার্তাকে বলেন, হাসান অত্যন্ত অমায়িক ব্যবহারের ছেলে ছিল। তার এই ভাবে মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারছি না। আমরা চাই তার হত্যার সুষ্ঠু বিচার হোক।

এদিকে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন টাঙ্গাইল সদর থানার উপ-পরির্দশক আরিফ রব্বানী। তিনি বলেন, মাথার বামদিকে ভুরুর উপরে গভীর কাটা ও ফাটা ছিল। এছাড়াও বামা হাতের কনুইতে চামড়া উঠানো পাওয়া গেছে।

সেতু’র উপপরিচালক (প্রশাসন) বিমল বাবু বিবার্তাকে বলেন, পিয়ারপুর শাখার ম্যানেজার ও সহকারী হিসাব রক্ষক দুইজনে যোগসাজশে ৪৩ লাখ ৪৯ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। এ ঘটনায় দুজনকে শহরের প্রধান শাখায় সংযুক্ত করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারা টাকা আত্মসাতের বিষয়টি স্বীকার করেন। অফিসের নির্মাণাধীন সাত তলায় তাদের থাকার জন্য একটি রুম দেওয়া হয়। সেখান থেকে লাফ দিয়ে হাসান আত্মহত্যা করেন। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।

টাঙ্গাইল সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তানবীর আহমেদ বলেন, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ম্যানেজার লিটন ও হাসানকে আটক করে রাখে সেতু কর্তৃপক্ষ। পরে জানতে পারি হাসানের লাশ সেতু ভবনের পশ্চিম পাশে পাওয়া গেছে। আমরা লাশ দেখতে পাই টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে। পরে ময়না তদন্ত করে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত করে আরও যারা জড়িত রয়েছে তাদের দ্রুতই গ্রেফতার করা হবে।

 

দৈনিক এরোমনি প্রতিদিন ডটকম তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন অনলাইন নিউজ পোর্টাল