হিলি প্রতিনিধি
অনুমতি থাকার পরও দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ডিম আমদানি করতে পারছেন না বলে অভিযোগ তুলেছেন বন্দরের ব্যবসায়ীরা। ফলে হিলিতে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো উদ্যোগই সফল হচ্ছে না। এজন্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষের বৈষম্য ও অসহযোগিতাকে দায়ী করছেন আমদানিকারকরা।
১৯ অক্টোবর, শনিবার হিলি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি ডিম সাইজ ভেদে খুচরা পর্যায়ে ১৩ থেকে ১৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত শুক্রবার প্রতিটি ডিম ১ টাকা বেশিতে বিক্রি হয়েছে। হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ডিম আমদানি শুরু হলে দাম ১১ টাকা হবে বলে জানান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা।
হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা জানান, শুধুমাত্র বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দেশে ডিম আমদানি করা হচ্ছে। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। ফলে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিকারকরা ডিম আমদানি করতে চেষ্টা চালিয়ে গেলেও বন্দরের স্থানীয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার কারণে আমদানি করা যাচ্ছে না।
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, গত বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) ডিম আমদানিতে ২৫ শতাংশ থেকে শুল্ক কমিয়ে ৫ শতাংশ করে। কিন্তু হিলি বন্দরের আমদানিকারকরা কোনো সুফল পাচ্ছেন না। এখানকার আমদানিকারকরা ডিম আমদানি করতে চান। এই সহযোগিতা কাস্টমসের কাছে চেয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। আমদানিকারকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক নুরল ইসলাম অভিযোগ করে জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আমরা ডিম আমদানি করার জন্য অনুমতি পেয়েছি। সেখানে কোথাও উল্লেখ নেই যে নিদিষ্ট কোনো বন্দর দিয়ে ডিম আমদানি করতে হবে। আমদানিকারকরা যেই বন্দর দিয়ে ডিম আমদানি করলে খরচ কম হবে সেই বন্দর দিয়ে আমদানি করবে এটাই ব্যবসায়িক নিয়ম। আমাদের জন্য হিলি বন্দর দিয়ে আমদানি করতে পরিবহনসহ বিভিন্ন খরচ কম হওয়ার জন্য আমরা আমদানি করার জন্য হিলি কাস্টমসে যোগাযোগ করি। কিন্তু কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলে এই বিষয়ে এই মুহূর্তে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারব না। এই বলে সময় ক্ষেপণ করছে। আমরা বাধ্য হয়ে বেনাপোল দিয়ে আমদানি করছি। এতে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
হিলি বন্দরের আরেক আমদানিকারক শহীদুল ইসলাম বলেন, যত সব বৈষম্য হিলি কাস্টমসে। আমাদের মনে হয় তারা কাজ সম্পর্কে কম জানেন। সরকার যেখানে আমদানিকারকদের অনুমতি দিয়ে দ্রুত ডিম আমদানি করে বাজার পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে, সেখানে কাস্টমসের অনভিজ্ঞ জনবলের কারণে সরকারের উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে। আমদানিতে কোনো পণ্যের ওজন নিদিষ্ট করার ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ থাকারও প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন তিনি।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন শিল্পী জানান, এই স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ডিম আমদানি করা গেলে অনেকটাই খরচ কম হবে। ফলে উত্তরাঞ্চলে ডিমের সরবরাহ বাড়ার পাশাপাশি কমে আসবে দামও। হিলি কাস্টমসের প্রতিবন্ধকতার কারণে আমদানিকারকরা ডিম আমদানি করতে পারছেন না। কাস্টমসের এই বাধা অতিদ্রুত নিরসন হওয়া দরকার। আমরা এ ব্যাপারে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
এদিকে হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের সহকারী কমিশনার নার্গিস আক্তার জানান, আমাকে এ বিষয়ে বুঝতে হবে। এটা নতুন পণ্য। নতুন কোনো কিছু হলেই আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো দরকার হয়। আবার পণ্যটি আসার পর শুল্কায়ন ও পরীক্ষায়নের ক্ষেত্রে কি কি বিষয় থাকবে সব মিলে আমাদের একটা প্রস্তুতির ব্যাপার রয়েছে। ব্যবসায়ীদের এটাই বলা হয়েছে। আমরা বলিনি যে আমদানি করতে পারবেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি ডজন ডিম ভারত থেকে দশমিক ৫৮ মার্কিন ডলারে আমদানি করা যাবে। সরকারের সদ্য ঘোষণা অনুযায়ী ডিম আমদানিতে ২৫ শতাংশ থেকে শুল্ক কমিয়ে ৫ শতাংশ করায় প্রতিটি ডিমে শুল্ক হবে ৫৩ পয়সার মতো। তাতে একেকটি ডিম আমদানি করতে সবমিলে খরচ হবে ১০ টাকার মতো।
দৈনিক এরোমনি প্রতিদিন ডটকম তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন অনলাইন নিউজ পোর্টাল