ঢাকাশনিবার , ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩
  1. ই পেপার
  2. ক্যাম্পাস
  3. খেলা
  4. চাকরি
  5. জাতীয়
  6. জীবনযাপন
  7. ধর্ম
  8. পাঠক কলাম
  9. পাবনা জেলা
  10. বাণিজ্য
  11. বাংলাদেশ
  12. বিজ্ঞান-প্রযুক্তি
  13. বিনোদন
  14. বিশেষ সংবাদ
  15. বিশ্ব
আজকের সর্বশেষ সবখবর

অবশেষে জয় পেলেন টাইগাররা

বার্তা কক্ষ
ডিসেম্বর ২৩, ২০২৩ ২:৫৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

স্পোর্টস: “এর আগে কোনো দলই করতে পারেনি (জিততে পারেনি)ৃ আমাদের বাংলাদেশ দল যতবারই এসেছে এখানে। তবে কোনো না কোনো একটা গ্রুপকে তো করতে হবে। আমার মনে হয় যে এই গ্রুপটির সেই সামর্থ্য আছে এবং সবাই বিশ্বাস করে যে, এ বছর আমাদের ভিন্ন ফল হবে”-সিরিজ শুরুর আগে বলেছিলেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। এই ধরনের কথা তো অধিনায়কেরা কতই বলেন। তার কথায় ভরসা করার লোক খুব বেশি ছিল না। কিন্তু তাদের নিজেদের বিশ্বাস যে ছিল, তা প্রমাণ হলো ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে। প্রথম দুই ম্যাচ জিতেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছিল নিউ জিল্যান্ড। শেষ ম্যাচের জয় তাই স্রফে সান্ত¡নার হওয়ার কথা। কিংবা গুরুত্বহীন। এখন তো ওয়ানডে সুপার লিগও নেই, পয়েন্ট প্রাপ্তির ব্যাপার নেই। কিন্তু তার পরও এই জয় অনন্য। এই জয়ের মাহাত্ম্য বাংলাদেশের ক্রিকেটে বিশাল। নেপিয়ারে শনিবার ম্যাচটি শুরুর আগে টিভি পর্দায় ফুটে ওঠে একটি গ্র্যাফিক্স। দেশের মাঠে টানা ১৭ ওয়ানডে জিতেছে নিউ জিল্যান্ড। এই ম্যাচ জিতলেই অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বরেকর্ড ছুঁয়ে ফেলবে তারা। রেকর্ডটি তখন স্রফে সময়ের ব্যাপার বলেই মনে হচ্ছিল। নিউ জিল্যান্ডে কিউইদের বিপক্ষে যে দল রঙিন পোশাকে কখনও জিততে পারেনি, তাদের বিপক্ষে আরেকটি জয় তো একরকম অবধারিতই। গত বছর মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে ঐতিহাসিক এক জয়ের স্বাদ পেয়েছিল বাংলাদেশ। নিউ জিল্যান্ডের মাঠে সেটিই ছিল তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয়। অন্য দুই সংস্করণে জয়ের সূচনাই হয়নি এবারের আগে। টি-টোয়েন্টিতে নিউ জিল্যান্ডে তাদের বিপক্ষে ৯ ম্যাচে হারতে হয়েছে সবকটিই। ওয়ানডেতে টানা পরাজয়ের ধারা এবার প্রথম দুই ম্যাচ হেরে পৌঁছে যায় ১৮-তে। কে ভাবতে পেরেছিল, শেষ ম্যাচেই সেই কাক্সিক্ষত মুহূর্তটি আসবে! নিউ জিল্যান্ডের বিশ্বরেকর্ড ছোঁয়া হলো না। বাংলাদেশকে আর অপেক্ষার অনলে পুড়তে হলো না। বরং আগুনে বোলিংয়ে তারাই পুড়িয়ে দিল নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটিং। এরপর দাপুটে ব্যাটিংয়ে অনায়াস জয়। ৯ উইকেটের এই জয়ে বেশ কিছু রেকর্ড গড়া হয়েছে। তবে জয়টাই সবচেয়ে স্বস্তির। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের মাঠে সীমিত ওভারের দুই সংস্করণ মিলিয়ে ২৭ ম্যাচ হারার পর প্রথম জয়ের স্বাদ! যেভাবে এই জয় ধরা দিল, সেটি না বললেও আসলে জয়ের গল্প অপূর্ণ রয়ে যাবে। নিউ জিল্যান্ডকে ৯৮ রানে গুটিয়ে দিয়ে, স্রফে ১ উইকেট হারিয়েই সেই রান ১৫.১ ওভারে তাড়া করা- চূড়ান্ত পেশাদারিত্বে মাখা জয় এটি। নিউ জিল্যান্ডে জয় অধরা ছিল, শুধু এটিই তো নয়। কতবার যে হেনস্তা হতে হয়েছে যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্সে! ২০০৭ সালে কুইন্সটাউনের সেই ম্যাচ তো ভোলার নয়। ৩৭.৩ ওভারে বাংলাদেশ অলআউট ৯৩ রানে। ব্রেন্ডন ম্যাককালামেন তা-বে নিউ জিল্যান্ড সেই রান টপকে যায় স্রফে ৬ ওভারেই! বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে ২৮ বলে ৮০ রানে অপরাজিত থাকেন ম্যাককালাম। তার সঙ্গী ওপেনা জেমি হাউ অপরাজিত থাকেন ৮ বলে ৭ রানে! শুধু ওই ম্যাচই নয়, বাকি প্রায় সব ম্যাচেই বাংলাদেশ হেরেছে বাজেভাবে। একটি-দুটি ম্যাচ ছাড়া সেভাবে লড়াই জমেইনি। এবার সেই বাংলাদেশই জিতে গেল ২০৯ বল বাকি রেখে। ১০০ ওভারের ম্যাচ শেষ ৪৬.৫ ওভারেই! উইকেটের হিসেবে এটি নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়। আয়ারল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ে ছাড়া এই প্রথম কোনো দলকে দুইশর বেশি বল বাকি রেখে হারাতে পারল বাংলাদেশ। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে তো এর আগে ৬০ বলের বেশি বাকি রেখে জয়ের নজির ছিল না। এক জয় মিলিয়ে দিল অনেক কিছুই। সেই জয়ের ভিত রচনা হয় পেসারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে। উইকেটে পেসারদের সহায়তা ছিল। সকালে আর্দ্রতাও ছিল। টস জিতে আগে বোলিংয়ের সুযোগ পেয়ে তা দারুণভাবে কাজে লাগান তানজিম হাসান, শরিফুল ইসলাম ও সৌম্য সকার। শুরুটা হয় তানজিমের হাত ধরে। আগের ম্যাচে তুলাধুনা হওয়া পেসার এবার নিজেকে মেলে ধরেন উল্টো চেহারায়। নিখুঁত লাইন-লেংথ আর সিম মুভমেন্ট দিয়ে নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের জন্য হয়ে ওঠেন বিভীষিকা। প্রথম দুটি উইকেট এনে দেওয়াই শুধু নয়, তার কয়েকটি ডেলিভারি এতটাই অসাধারণ ছিল যে জবাব পাননি ব্যাটসম্যানরা। তার প্রথম স্পেল ছিল ৫-১-৯-২। শরিফুল প্রথম স্পেলে ৪ ওভারে ১৬ রান দেওয়ার পর তাকে বিরতি দেওয়া হয়। আরেক পেসার মুস্তাফিজুর রহমান খুব একটা প্রভাব রাখতে পারেননি। উইল ইয়াং ও টম ল্যাথাম তখন জুটি জমিয়ে তুলতে শুরু করেছেন। শান্তর মনে পড়ে শরিফুলের কথা। তাকে দ্বিতীয় স্পেলে বোলিংয়ে আনেন অধিনায়ক। এবার শরিফুল হয়ে ওঠেন বিধ্বংসী। তার লাইন-লেংথ আর সিম মুভমেন্টে টানা তিন ওভারে কাটা পড়েন তিন কিউই ব্যাটসম্যান। ২ উইকেটে ৫৮ থেকে নিউ জিল্যান্ড হয়ে যায় ৫ উইকেটে ৬৩। ওই স্পেলে শরিফুলের বোলিং ফিগার ৩-০-৬-৩! মেরুদণ্ড ভেঙে পড়ার পর কিউই ব্যাটিং আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। তিন উইকেট নিয়ে তাদেরকে আরও নুইয়ে দেন সৌম্য সরকার। খুব ভালো বোলিং না করলেও শেষ উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষের ইনিংস গুটিয়ে দেন মুস্তাফিজ। পেস বোলিংয়েই ১০ উইকেট বাংলাদেশ নিতে পেরেছে আগে আর একবারই। গত মার্চে সিলেটে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ উইকেট নেন হাসান মাহমুদ, ৩টি তাসকিন আহমেদ ও ২টি ইবাদত হোসেন চৌধুরি। বাংলাদেশ দলকে ঘিরে সংশয় এখন এত বেশি যে ৯৯ রান তাড়ায়ও হয়তো অনেকেই মনের ভেতর ‘কু’ ডাক শুনছিলেন। তবে নাজমুল হোসেন শান্ত ও এনামুল হক সেসব উড়িয়ে দিয়েছেন। জয়ের মূল কৃতিত্ব অবশ্যই পেসারদের। তবে যদি বলা হয় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত, বাড়িয়ে বলা হয় না একটুও। শুধু ব্যাটে হাতে ৪২ বলে ৫১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন বলেই নয়, ম্যাচের প্রথম ভাগে তার নেতৃত্বও ছিল নজরকাড়া। প্রথমত, উইকেট ঠিকভাবে পড়তে পারার জন্য তাকে ও বাংলাদেশের ম্যানেজমেন্টকে শতভাগ নম্বর দিতেই হবে। এরপর, বোলারদের যেভাবে ব্যবহার করেছেন অধিনায়ক, তার ট্যাকটিকাল দক্ষতা ও ম্যাচ পরিস্থিতি পড়তে পারার ক্ষমতা তাতে ফুটে উঠেছে দারুণভাবে। চাপ ধরে রাখতে একদম সময়মতো শরিফুলকে ফিরিয়েছেন তিনি দ্বিতীয় স্পেলের জন্য। তানজিমকেও তিনি দ্বিতীয় স্পেলে ফিরিয়েছেন আদর্শ সময়ে। কন্ডিশন ও উইকেট বুঝে সৌম্য সরকারকে দারুণভাবে ব্যবহার করেছেন অধিনায়ক। একটা সময় অবশ্য মনে হচ্ছিল, সৌম্যকে একটু বেশিই বোলিং করানো হচ্ছে। হয়তো শরিফুল-তানজিমদের বোলিংয়ে এনে আরও চেপে ধরা যেত নিউ জিল্যান্ডকে। কিন্তু সৌম্য শেষ পর্যন্ত সঠিক প্রমাণ করে ছাড়েন শান্তর সিদ্ধান্তকেই। এ ছাড়া নতুন ব্যাটসম্যানদের জন্য বাড়তি স্লিপ রাখতে অধিনায়কের ভুল হয়নি একবারও। ফিল্ডিং সাজানোও ছিল প্রায় নিখুঁত। দেশের মাঠে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের পর এবার নিউ জিল্যান্ড সফরেও নিজের নেতৃত্বের উজ্জ্বল বিজ্ঞাপন মেলে ধরলেন তিনি। সব মিলিয়ে পরিপূর্ণ এক জয়। নিউ জিল্যান্ডে তাদের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে জয় তো এমনিতেই স্মরণীয় কিছু। এই জয়টি আরও বিশেষ হয়ে উঠছে জয়ের ধরণ ও উপকরণগুলো মিলিয়ে।

দৈনিক এরোমনি প্রতিদিন ডটকম তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন অনলাইন নিউজ পোর্টাল